মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে দায়িত্বহীনতা বা সহিংসতা উসকে দেওয়া নয়: রাষ্ট্রদূত মুশফিক

মেক্সিকোতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস, মেক্সিকো সিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।

দিবসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। এরপর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল বীর ও স্বাধীনতার অগ্রণায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই গৌরবময় দিনে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তাদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অসীম সাহস জাতির ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা কেউ কোনো সোনার থালায় সাজিয়ে উপঢৌকন হিসেবে এনে দেয়নি, এটি ছিনিয়ে নিতে হয়েছে রক্তস্নাত যুদ্ধ, ত্যাগ ও আত্মবিসর্জনের বিনিময়ে। সেই অদম্য সাহস ও প্রতিবাদের উত্তরাধিকার আমরা দেখেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে, যেখানে নির্ভীক তরুণরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল নিপীড়ন, অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। বিজয় দিবসের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সকল শহীদ ও সাহসী যোদ্ধাদের, যারা নিজেদের জীবন, নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বাজি রেখে ইতিহাস গড়েছেন। তাদের বীরত্ব আমাদের প্রেরণা, আমাদের পথনির্দেশ। জুলাই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে।’

রাষ্ট্রদূত মুশফিক সতর্ক করে বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই অবারিত থাকবে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে গণতন্ত্র হত্যাকারী, খুনি ও লুটেরা চক্রকে পুনর্বাসনের চক্রান্ত মেনে নেয়া যায় না।’ এ সময় তিনি ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান রোধে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করার প্রবণতার বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে দায়িত্বহীনতা নয়। আমাদের বক্তব্য, বিবৃতি কিংবা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কোনো কন্টেন্ট যেনো সামাজিক অস্থিরতা কিংবা সহিংসতাকে উসকে না দেয়।’

পাশাপাশি তিনি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশে এক নতুন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সূচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিক।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন তরুণ সদস্য মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দূতাবাসের মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে এক দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির শেষে দূতাবাসের গার্ডেনে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *