ইইউ’র ‘নিরাপদ দেশ’ তালিকায় বাংলাদেশ: বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য বিপদ সংকেত

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন (European Commission)। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি অভ্যন্তরীণ নথি অনুসারে, তারা বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে কলম্বিয়া, মিশর, ভারত, কসোভো, মরক্কো এবং তিউনিসিয়া।

নতুন এই নীতির আওতায় এসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে এবং দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে এবং বলা হচ্ছে, এটি ইইউ’র বহুল আলোচিত আশ্রয় প্রক্রিয়া সংস্কারের অংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য এক ধরনের বিপদ সংকেত। ইউরোপে বহু বাংলাদেশি রাজনৈতিক নিপীড়ন, চরম দারিদ্র্য ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের আশায় পাড়ি জমান। অথচ, বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলে তাদের সেই আশ্রয় পাওয়ার পথ হয়ে উঠবে আরও জটিল ও সংকুচিত।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ‘নিরাপদ দেশ’ নির্ধারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে মানদণ্ড ব্যবহার করছে, তাতে স্থানীয় বাস্তবতা ও মানবিক পরিস্থিতির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেপ্তার, বাক-স্বাধীনতার সংকোচন ইত্যাদি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশটিকে ‘নিরাপদ’ বলে ঘোষণা করা একপেশে সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেকেই।

ইইউর অভ্যন্তরে এই প্রস্তাব নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। মার্চ মাসে ইউরোপীয় কমিশন একটি বাধ্যতামূলক রিটার্ন সিস্টেমের প্রস্তাব দেয়, যাতে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত দেশগুলো থেকে আগতদের দ্রুত ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কমিশনের এক মুখপাত্র এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সূত্র বলছে, চূড়ান্ত তালিকাটি জুন মাসের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে।

‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ নীতির আওতায় ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ একটি আশ্রয়প্রার্থীকে এমন একটি দেশে ফেরত পাঠাতে পারে, যেখানে তার জীবনের জন্য কোনো স্পষ্ট হুমকি নেই— এমনকি সেটি তার জন্মভূমি না-ও হতে পারে। এই ধারণাটি এখন আরও বিস্তৃত আকারে প্রয়োগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইইউ।

নিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান পাওয়ার খবরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সহ সরকারের ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বস্তি প্রকাশ করে স্টেটাস প্রকাশ করলেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, ইউরোপে বাংলাদেশি নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। মানবিক মূল্যায়নের বদলে প্রশাসনিক সরলীকরণের দিকে ঝুঁকে পড়ার ফলে অনেক প্রকৃত বিপন্ন মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলেও সতর্ক করছেন তারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *