রাজধানীর আলোচিত ‘টিপকাণ্ড’ নিয়ে এবার নতুন মোড়। এই ঘটনার কেন্দ্রে থাকা বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক এবার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার (Lata Samadder), তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Dhaka) প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মলয় মালা, এবং দেশের বিনোদন অঙ্গনের ১৬ তারকার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালতে মামলার আবেদন করেন নাজমুল। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি শেরেবাংলা নগর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী তৌহিদ খান।
অভিযুক্ত তারকাদের তালিকায় কারা?
মামলার আসামিদের তালিকায় আছেন অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সুবর্ণা মোস্তফা (Suborna Mustafa), নাট্যজগতের পরিচিত মুখ আনিসুর রহমান মিলন, সাজু খাদেম, প্রাণ রায়, সায়মন সাদিক, মনোজ প্রামাণিক, স্বাধীন খসরু, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, দেবী সান, নাজনীন নাহার চুমকি, সুষমা সরকার এবং কুসুম সিকদার। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন শোবিজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ কী?
নাজমুল তারেকের অভিযোগ, ২০২২ সালের টিপকাণ্ডের ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে যেসব তারকা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তারা তার ছবি এবং নাম উল্লেখ করে পোস্ট করে ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশের মানহানি করেছেন। এতে তার পেশাগত সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং সামাজিক জীবনে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, “আসামিরা ব্যক্তি আক্রোশ ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদীর বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন, যা আইনগতভাবে মানহানিকর।”
‘টিপ’ প্রসঙ্গে অতীত ঘটনা
২০২২ সালের ২ এপ্রিল ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তার পায়ে একটি মোটরসাইকেল লাগার পর পুলিশ পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেন—”টিপ পরছোস কেন?” এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এরপর দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়, বহু তারকা ‘টিপ’ পরে ছবি পোস্ট করে লতার প্রতি সংহতি জানান। নারীর পোশাক ও স্বাধীনতার প্রশ্নে উত্তাল হয়ে ওঠে সামাজিক মাধ্যম।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাজমুল তারেক চাকরি হারান। তিনি দাবি করেন, তদন্ত শেষ না হওয়া সত্ত্বেও তাকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চাকরি ফেরত চেয়ে আইনি লড়াই
চাকরি হারানোর পর থেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নাজমুল। তার মামলা বর্তমানে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পুনরায় চাকরিতে বহালের আবেদনও করেছেন তিনি।
এই মামলার ফলে আলোচিত ‘টিপকাণ্ড’ নতুন করে সামনে এসেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—প্রতিবাদ জানানো কি মানহানির শামিল?