২০২৬ সালের এপ্রিল মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও বিএনপি (BNP) সহ একাধিক রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে, তবে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কারণ বিবেচনায় সরকার এখন এপ্রিলকে সবচেয়ে যৌক্তিক সময় হিসেবেই বিবেচনা করছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে, বড় কোনো অপ্রত্যাশিত সংকট না এলে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে সরকারপ্রধান এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নিজেও ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা করেছেন।
কেন এপ্রিল?
ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে বাস্তবায়নযোগ্য মনে করছেন না প্রশাসনের শীর্ষ মহল। কারণ, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় জুড়ে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলে। ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে তা শেষ হয় ২ মার্চ ‘ভোটার দিবসে’। এর মধ্যেই পড়ে পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর—যা আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চেই অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মীয় এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে ঘিরে নির্বাচন আয়োজনে কঠিন বাস্তবতা তৈরি হয়।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোজার সময় নির্বাচন আয়োজন কখনোই সহজ নয়। ফলে এই সময়টিকে বাদ দিয়েই তারা ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এপ্রিলে ঈদের পর আবহাওয়ার দিক থেকেও নির্বাচন আয়োজন কিছুটা সুবিধাজনক।
জুনের আগেই ভোট, বলছে অভ্যন্তরীণ মহল
সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সময়সীমা জুন পর্যন্ত ধরা হলেও জুন মাসে অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় সে সময় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য তারিখ ও উপযুক্ত সময় নিয়ে পর্যালোচনাও শুরু হয়েছে।
রোডম্যাপ ঘোষণা হবে জুন-জুলাইয়ে, এমনটিই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই রোডম্যাপ ঘোষণার পরেই এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই সময়ের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে কমিশনকে।
অতীত নির্বাচনের ব্যতিক্রম ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট
এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম ছিল ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন, যথাক্রমে মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তারা ইতিমধ্যে বিএনপি, জামায়াত (Jamaat), এনসিপি (NCP) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। তবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান রমজানের আগেই নির্বাচন চান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে এনসিপি বলছে, তারা মূল সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মেনে নেবে না, বরং নির্বাচন পিছিয়ে সময় নিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষেই তারা।
তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময়সীমা ও রোডম্যাপ নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে ঐসব দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে উঠছে না। বিএনপি তার সঙ্গে বৈঠকে “স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ” দাবি করলেও কোনো নিশ্চয়তা না মেলায় দলটির শীর্ষ পর্যায়ে অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত দিন-তারিখ জানাবে বলে আভাস মিলেছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের দিক থেকে পরিষ্কার বার্তা— ডিসেম্বরে নির্বাচন নয়, লক্ষ্য এপ্রিল।