সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। কিন্তু গণমাধ্যমে ভুলভাবে তাঁর পদত্যাগকে ‘অপসারণ’ হিসেবে উপস্থাপন করায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে ফেসবুক পোস্টে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দেন তিনি।
গতকাল (মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল) ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টে মোয়াজ্জেম জানান, তিনি রাজনীতি ছেড়ে স্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে ব্যাংক ও বিসিএস পরীক্ষায় মনোনিবেশ করেন এবং সে লক্ষ্যেই পদত্যাগ করেছেন। এর সঙ্গে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনসহ নিজের পদত্যাগপত্রের কপিও প্রকাশ করেন।
তিনি লেখেন, “২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময় প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হই। এরপর দীর্ঘদিন ছাত্র অধিকার পরিষদে কাজ করেছি। তবে ২০২৩ সালে রাজনীতি ছেড়ে ক্যারিয়ার তৈরির সিদ্ধান্ত নিই। ৪৬তম বিসিএস প্রিলি এবং ব্যাংকের অফিসার ক্যাশ প্রিলিও পাস করি। ফলে ব্যাংকের লিখিত ও বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল।”
তিনি জানান, “আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud) যখন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন কাজের প্রস্তাব দেন। তখনই আমি বলে দিই—স্থায়ী ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে যে কোনো সময় চাকরি ছাড়তে পারি।” তিনি গত ২৫ মার্চ পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা ৮ এপ্রিল গ্রহণ করা হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (Ministry of Public Administration) গত ২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে।
তবে প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে মোয়াজ্জেমের পদত্যাগকে ‘অপসারণ’ বলে উপস্থাপন করা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “একদল আমাকে আমেরিকায় বাড়িওয়ালা বানিয়েছে, কেউ বলেছে দুবাইতে রিসোর্ট আছে, কেউ আবার বলেছে আমি ৩০০ কোটি বা ৩০০০ কোটি টাকার মালিক! এ ধরনের গুজব ভিত্তিহীন ও মানহানিকর।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, যদি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সম্পদ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে থাকে, তবে যথাযথ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন, আমি কিংবা আমার আত্মীয়স্বজনের সম্পদ বেড়েছে, তাহলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিন।”
পোস্টে মোয়াজ্জেম এও জানান, দায়িত্বে থাকাকালীন অনেকে প্রবাসী পরিচিত ব্যক্তি তাঁকে পোশাক বা ফোন উপহার দিয়েছেন, তবে সেটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকেই। সরকারি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টিও দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, “আমি কাউকে এপয়েন্টমেন্ট ছাড়া দেখা দিতাম না, সবার দাবি পূরণ করা সম্ভব ছিল না। এতে অনেকে হয়তো বিরক্ত হয়েছেন। কিন্তু আমার দায়িত্ব সহজ ছিল না।”
পোস্টের শেষাংশে মোয়াজ্জেম আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তিনি দেশের জন্য যা করেছেন, তার সঠিক মূল্যায়ন একদিন হবে। “আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার চেষ্টা ও অবদানের প্রতিদান দেবেন,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, মোয়াজ্জেম হোসেনের এই ফেসবুক পোস্ট নিজেই শেয়ার করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud)। শেয়ারকৃত পোস্টে লেখা হয়েছে, “মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে আদেশ কার্যকর করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।”