রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে স্বাধীন রাষ্ট্র চায় জামায়াত

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের (Dr. Syed Abdullah Md. Taher)। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (Chinese Communist Party) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে ‘স্বাধীন আরাকান মুসলিম রাষ্ট্র’ গঠনের দাবি তুলে ধরা হয়।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডা. তাহের জানান, চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বাধীন আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাবনা চীনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। তাহের বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের এ অবস্থান দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।”

তাহের আরো জানান, চীনকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক রিফিউজি রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটি গঠনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “চীনের মিয়ানমারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তারা চাইলে স্বাধীন মুসলিম আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।” চীনা প্রতিনিধি দল আশ্বাস দিয়েছে, এ প্রস্তাব তারা নিজ দেশের সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে এবং সম্ভাব্য উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করবে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় জামায়াত
ডা. তাহের জানান, গত ডিসেম্বরে জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল চীনে সরকারি আমন্ত্রণে গিয়েছিল। সেখানে চীনা সরকারের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ের বৈঠক হলেও এবারের বৈঠক ছিল দলীয় পর্যায়ে। তিনি বলেন, “চীন এখন বিশ্বের একটি উদীয়মান শক্তি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জামায়াত আন্তরিক।”

তিস্তা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে ডা. তাহের বলেন, “গভীর সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমাদের ব্লু ইকোনমি আরও প্রসারিত হবে।” এছাড়া, বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য চীনা স্কলারশিপ বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়।

নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েও আলোচনা
সভায় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া এবং সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তাহের জানান, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমাদের চলমান আলোচনা রয়েছে, এবং আমরা প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ডিসেম্বর বা জুনের নির্বাচনী সময়সূচিকে সমর্থন করি।”

চীনা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো সরাসরি মন্তব্য না করে শুধু জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করে না।

সভায় জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। আলোচনার সারাংশে স্পষ্ট, জামায়াত এখন কূটনৈতিক পরিসরেও নিজেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দৃশ্যমান করতে চায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *