সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, জাতীয় সংলাপ ও সংষ্কার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)— বিএনপি (BNP) নয়। অভ্যুত্থানপন্থী ছাত্ররা যখন ‘গভীর সংষ্কার আগে, পরে নির্বাচন’ এই নীতিতে অটুট ছিলো, তখন জামায়াত পর্দার আড়াল থেকে তাদের সমর্থন দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে সুবিধা নিচ্ছিলো।
প্রফেসর ইউনুসের প্রস্তাবিত টাইমলাইন অনুযায়ী ব্যাপক সংষ্কার অসম্ভব বলেই বিশ্লেষকদের মত। ছাত্রদের দল যেহেতু গভীর সংষ্কারের ওপর জোর দিয়েছিলো, জামায়াতও তখন নেপথ্যে সেই দাবিকে প্রশ্রয় দিয়ে সময় নিতে চাইছিলো— নিজেদের পুনর্গঠনের জন্য। অথচ গত দুই সপ্তাহে দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। এখন জামায়াত দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, বিশেষ করে আগামী রমজানের আগেই। এতে ছাত্রদের দল কার্যত একা হয়ে পড়েছে— কারণ তারা এখনও গভীর সংষ্কারের দাবিতে অনড়।
এনসিপি (NCP) যে নতুন রাজনীতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলো, জামায়াতের এহেন অবস্থান বদলের ফলে সেই আশাবাদ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াত এখন বুঝে গেছে ছাত্রদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতা তাদের জন্য লাভজনক নয়। তাই ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ময়দানে ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়ে এখন নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান নিতে চাইছে।
আরো লক্ষণীয়, ছাত্রদের দলের ভেতরে একটা বড় অংশ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চেয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরামর্শও জামায়াতের পক্ষ থেকে এসেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররা মাঠ পর্যায়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে— এমনটাই ছিলো পরিকল্পনা। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে স্পষ্ট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ছাত্রদের লাভ হবে না; বরং জামায়াতই সুবিধা পাবে তাদের প্রতিষ্ঠিত সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে।
অন্যদিকে, বিএনপি শুরু থেকেই একমুখী অবস্থান বজায় রেখেছে— ন্যূনতম সংষ্কার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন। বিএনপি কখনো রাজনৈতিক দাবিতে নাটকীয় ইউটার্ন নেয়নি, যা তাদের ধারাবাহিকতার প্রমাণ। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক থেকেছে, কারণ তারা জানে এতে দলীয় বিভাজন বাড়বে।
এমন অবস্থায় ছাত্রদের দল রাজনৈতিকভাবে বিপাকে পড়েছে। একদিকে বিএনপিকে শত্রু করে তুলেছে, অন্যদিকে জামায়াতের কাছে নৈতিক সমর্থন হারিয়েছে। এমন বাস্তবতায় ছাত্রদের দল যদি শেষ পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচন বর্জন করে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইতিমধ্যেই ছাত্রদের শীর্ষস্থানীয় নেতা নাহিদ হতাশার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, এনসিপির দ্রুত রাজনৈতিক অপমৃত্যু ঘটার ঝুঁকি প্রবল— এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।