গাবতলী হাটের ইজারাতেও স্বজনপ্রীতি – দুর্নীতির থাবা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন গাবতলী পশুর হাটে সর্বোচ্চ দরদাতা থাকা সত্ত্বেও হাট ইজারা না দিয়ে করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ‘খাস আদায়ের’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ ইজারা দেওয়া হলে সরকারের রাজস্ব আয় হতো প্রায় ২৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ ভ্যাট ও আয়কর অন্তর্ভুক্ত থাকত।

প্রশাসক দাবি করছেন, দরপত্রপ্রক্রিয়ায় নিয়মবহির্ভূততা ছিল। তবে সিপিটিইউসহ (বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি) সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, পশুর হাটের ইজারা সরকারি কেনাকাটার আওতায় পড়ে না, ফলে তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রয়োজনও নেই। ডিএনসিসির দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আরাত মোটর-কে ইজারা দেওয়া হয়নি।

বরং, অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসকের পছন্দের ব্যক্তি রাইয়ান এন্টারপ্রাইজের সাইদুল ইসলাম এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে খাস আদায় চলছে। এ বিষয়ে গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা গেছে, করপোরেশনের কর্মীদের উপস্থিতিতে টাকার আদায় করছেন সাইদুলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর নিয়োজিত ব্যক্তিরা। ডিএনসিসির অঞ্চল-৪-এর কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এই তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করেছেন।

আরাত মোটরের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন জানান, তাঁদের পে-অর্ডার এখনো জমা আছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা বাতিলের লিখিত সিদ্ধান্ত এখনো জানানো হয়নি। এমন সিদ্ধান্তের মধ্যেই ১৫ এপ্রিল থেকে খাস আদায় শুরু হয়েছে এবং ছয় দিনে আয় হয়েছে মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, যেখানে ইজারা দেওয়া হলে দৈনিক আয় হতো সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি।

প্রশাসক এজাজ বলছেন, ঈদুল আজহা সামনে থাকায় এখন পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব নয়। কোরবানির ঈদের সময়ই গাবতলী হাটে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় এবং তখন হাসিল আদায় হয় শতকরা ৫ শতাংশ হারে। ফলে, কর্মকর্তাদের মতে, ইজারার পরিবর্তে খাস আদায়ের মাধ্যমে কোরবানির সময়ের মোটা অঙ্কের অর্থ আহরণ করাই এই চক্রের লক্ষ্য।

এ বিষয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গাবতলী হাটে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত এবং কোনো বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে হয়ে থাকতে পারে। তিনি জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

ডিএনসিসির প্রশাসক অবশ্য এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলছেন এবং দায়ভার কর্মকর্তাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যানুয়ালে যা লেখা আছে, আমরা তাই অনুসরণ করছি। আইনের বাইরে যাব না।’

তবে ঘটনাপ্রবাহ এবং মাঠপর্যায়ের তথ্য এটিই দেখাচ্ছে—গাবতলীর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সম্ভাবনাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে গোপন পক্ষপাত এবং অনিয়মের অভিযোগ।

উল্লেখ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সুপারিশে ডিএনসিসি প্রশাসক হিসাবে নোয়োগ পান মোহাম্মদ এজাজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *