সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জামায়াত নেতার বাড়ীতে সেনা অভিযান

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামায়াতে ইসলামী নেতা দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। সেনাবাহিনীর দাবি, সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংশ্লিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের স্থানীয় নেতারা এটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার গভীর রাতে সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর একটি দল। পরদিন বুধবার সন্ধ্যায়, কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. আবু তাহের ও সেক্রেটারি যায়েদ হোসাইন এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে দেলোয়ার হোসেনকে “সংগঠনের শুভাকাঙ্ক্ষী” এবং ওয়ার্ড জামায়াতের সহ-সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মাওলানা আবু তাহের বলেন, “আমরা মনে করি, একটি কুচক্রী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে দেলোয়ার হোসেনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সংগঠনের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।”

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার তিনি নিজে দেলোয়ারকে নিয়ে সেনা ক্যাম্পে যাবেন এবং পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দেবেন। “আমরা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং এ ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কুশীলবদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই,” বলেন আবু তাহের।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, এই অভিযান কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নয়, বরং সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংশ্লিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। কাঞ্চনা ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা সাতকানিয়া সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন পারভেজ বলেন, “সম্প্রতি এই এলাকায় একাধিক অপহরণ ও অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে দেলোয়ার হোসেনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার নাম বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের সাথেও জড়িত পাওয়া গেছে।”

তিনি জানান, অভিযানের সময় দেলোয়ারকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের পক্ষ থেকে তদন্ত অব্যাহত থাকবে।

এ সময় ক্যাপ্টেন পারভেজ আরও বলেন, “আমরা সন্ত্রাস দমন করছি, এখানে দল-মত দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না। যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হবে অথবা সম্ভাবনা থাকবে, সেখানেই আমাদের অভিযান চলবে। দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত।”

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র আলোচনা চলছে, যেখানে একদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর দৃঢ় অবস্থান, অন্যদিকে জামায়াতের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া—দুই মেরুতে বিভক্ত করে তুলেছে জনমত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *