১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিডিআর বিদ্রোহের ২৭ জওয়ান

পিলখানায় ২০০৯ সালের নৃশংস বিডিআর বিদ্রোহ সংক্রান্ত বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় জামিন পাওয়া ৪০ জন আসামির মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মুক্তি পেয়েছেন ২৭ জন। সকালে বিভিন্ন ইউনিট থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ থেকে ৫ জন, পার্ট-২ থেকে ১০ জন এবং হাইসিকিউরিটি ইউনিট থেকে ১১ জন সাবেক বিডিআর সদস্য সকাল ১০টা থেকে একে একে কারা ফটক পেরিয়ে বেরিয়ে আসেন। এ সময় দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনদের মুক্তি পেয়ে স্বজনদের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ছাপ।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক ইব্রাহীম মিয়া (Ibrahim Mia) বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ৪০ জন আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবারও একই কারাগার থেকে আরও এক আসামি জামিনে মুক্তি পান।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর জেল সুপার মোহাম্মদ আল মামুন (Mohammad Al Mamun) জানান, “মঙ্গলবার বিকেলে জামিনপ্রাপ্তদের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়। যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার সকালে তাদের মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।”

এর আগে, হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১৭৮ জন বিডিআর সদস্যও বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ২১৮ জন জামিন পেলেন।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে এক ভয়াবহ ও রক্তাক্ত বিদ্রোহ ঘটে। বিদ্রোহের সময় মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ (Major General Shakil Ahmed) সহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে নিহত হন। দুইদিনব্যাপী সেই বিদ্রোহে প্রাণ হারান মোট ৭৪ জন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় এই মামলায় ৮৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই হত্যা মামলার রায়ে বিচারিক আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগেই চারজন আসামি মারা যান।

হত্যা মামলার রায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি এখনও বিচারাধীন এবং এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩৪৪ জন।

জামিন পাওয়া সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কারা ফটকে আবেগঘন মুহূর্তে জানান, দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে প্রিয়জনদের পাশে পেয়ে তারা আশার আলো দেখছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *