দেশে চলমান অর্থনৈতিক চাপে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিকে দেশে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। এক বছরে নতুন করে বেকার হয়েছেন প্রায় সোয়া তিন লাখ মানুষ। এখন দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩০ হাজারে।
এই হিসাব ১৯তম আন্তর্জাতিক শ্রমশক্তি পরিসংখ্যান সম্মেলন (আইসিএলএস) অনুযায়ী করা হয়েছে, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অনুসৃত হয়। আগের বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, তখন বেকার সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার।
একই সময় বিবিএস পুরনো ১৩তম আইসিএলএস গাইডলাইনের আওতায়ও হিসাব প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এই গাইডলাইন অনুসারে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ১০ হাজার, যা আগের বছরের ২৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে।
বিবিএস-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা গত সাত দিনে অন্তত এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি, কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতনের বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন, তাদেরই বেকার হিসেবে ধরা হয়।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায় ১৩তম ও ১৯তম আইসিএলএসের মাঝে। ১৩তম আইসিএলএস অনুযায়ী, পারিবারিক প্রয়োজনের জন্য কোনো পণ্য উৎপাদন বা সেবামূলক কাজও কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ১৯তম আইসিএলএসে শুধুমাত্র বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে করা কাজই চাকরিতে নিযুক্ত হিসেবে গণ্য হয়। ফলে দুটি গাইডলাইনের আওতায় বেকারত্বের হার ও কর্মসংস্থানের ছবিতে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
সমালোচনার মুখে পড়ে বিবিএস এখন উভয় আইসিএলএস অনুযায়ী তথ্য প্রকাশ করছে, যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে ভবিষ্যতে শুধু ১৯তম আইসিএলএস অনুসারেই শ্রমবাজার পরিসংখ্যান প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।