গণমাধ্যমে কাঠামোগত সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১২ দফা সিদ্ধান্ত

গণমাধ্যম খাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিশ্চিত করতে ১২টি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় (Ministry of Information and Broadcasting)। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন (Media Reform Commission)-এর সুপারিশের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ চলছে বলে বৃহস্পতিবার এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংস্কার বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিস্তারিত পর্যালোচনা হয় এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়।

সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার রক্ষায় অধ্যাদেশ

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে একটি বিশেষ অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতি চলছে। এই অধ্যাদেশ পেশাগত অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার পথ সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাঠক জরিপ ও প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার

সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS)-র মাধ্যমে নিয়মিত বার্ষিক পাঠক ও দর্শক জরিপ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও আর্থিক সংস্কার

পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন হারে যৌক্তিক সমন্বয় আনার পরিকল্পনার পাশাপাশি, বিজ্ঞাপন শিল্পে অস্বচ্ছতা আছে কি না তা তদন্তে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (Bangladesh Competition Commission)-এর সহায়তা নেওয়া হবে।

এফএম রেডিওর লাইসেন্সের জামানত ফি কমিয়ে আনা হয়েছে এবং বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর ধার্য ২ শতাংশ সরকারি ফি বাতিল করা হয়েছে। তবে, সরকারি ঘোষণাগুলো বিনামূল্যে সম্প্রচারের বাধ্যবাধকতা বজায় থাকবে।

কর ছাড় ও সম্মানী নীতিতে পরিবর্তন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর ছাড়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, কলাম লেখক, শিল্পী, আলোচক ও অতিথি উপস্থাপকদের সম্মানীর ওপর অগ্রিম আয়কর (AIT) বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্যাটেলাইট স্বাধীনতায় নতুন পথ

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আপ-লিংক ও ডাউন-লিঙ্ক বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (BSCL)-এর মাধ্যমে করতে বাধ্য থাকার নিয়ম শিথিল করা হবে। চ্যানেলগুলোকে বিকল্প সেবা ব্যবহারের সুযোগ দিতে বিএসসিএলের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা চলছে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কাঠামোয় আধুনিকায়ন

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (PIB) এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট-এর পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন ও প্রতিষ্ঠান দুটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘বিসিএস ইনফরমেশন একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।

সরকারের ভাষ্য মতে, এই সংস্কারমূলক সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা, গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকাশ এবং মিডিয়ার কাঠামোগত উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *