‘একটা পদেই এই অবস্থা, জাতীয় নির্বাচনে তারা কী করবে—বোঝাই যাচ্ছে’: ইশরাক

‘মেয়র হওয়াই উদ্দেশ্য নয়, এই আন্দোলন শুধু একটি পদের জন্য নয়’—এই বার্তা নিয়েই কাকরাইলে রাজপথে নেমে এলেন ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)। বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির এই বিশেষ সহকারী বুধবার সন্ধ্যায় কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিজেও রাস্তার উপর বসে পড়েন। এর আগে ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজপথে থাকার, আর সেই ঘোষণাই রূপ নিল বাস্তবতায়।

এই তরুণ বিএনপি (BNP) নেতা বলেন, ‘একটা পদ নিয়েই তারা যা করল, নির্বাচনে কী করবে তা তো বোঝাই যাচ্ছে।’ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্নে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। ইশরাক মনে করেন, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ব্যবহার করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছে সরকারপন্থীরা।

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন একটি দল নিয়ে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু সরকারের দুই উপদেষ্টা বিএনপিকে দমন করতে মাঠে নেমেছেন।’ এই অবস্থায় আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud) সহ ওই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। তাদের উদ্দেশ্যে ইশরাকের আহ্বান—‘পদত্যাগ করে রাজনীতি করুন, কিন্তু সরকারের কাঠামোর ভেতর থেকে নয়।’

শুধু নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান বা কোনো মেয়র পদ নয়, আন্দোলনটি যে বৃহৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অংশ—সেটা জোর দিয়ে বলেন ইশরাক। তার অভিযোগ, তাঁকে ‘বৈষম্যের শিকার’ করা হয়েছে এবং রায় পেয়েও মেয়রের দায়িত্ব নিতে দেওয়া হয়নি। ‘এই আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে, একটি পদের জন্য নয়’, বলেন তিনি।

এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর কাকরাইল, প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন এলাকায় বিপুলসংখ্যক সমর্থক জড়ো হতে থাকেন ইশরাকের ডাকে। সকাল ১০টার মধ্যে যদি মেয়র হিসেবে তাঁর দায়িত্ব হস্তান্তর না করা হয়—এই শর্তে শুরু হয় অবস্থান কর্মসূচি। এর প্রেক্ষিতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। শাহবাগ, হাইকোর্ট মোড়সহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

একইসঙ্গে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে যুক্ত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (Dhaka South City Corporation) এর জাতীয়তাবাদী সমর্থিত কর্মচারী সমিতি। তারা নগর ভবনের বিভিন্ন বিভাগের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং ময়লা পরিষ্কার, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সব নাগরিক সেবা বন্ধ রাখে। দুপুরের দিকে নগর ভবন এলাকা কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ে।

এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাকের শপথ না নেওয়ার নির্দেশনার রিট শুনানি আজ আবারও গ্রহণ করা হয়। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও দেবাশীষ রায়ের বেঞ্চ আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করেছেন।

রাজপথ না ছাড়ার দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে ইশরাক দুপুরে ফের একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। তাতে তিনি লিখেন, ‘নির্দেশ একটাই— যতক্ষণ দরকার, রাজপথ ছাড়ব না।’ তাঁর ভাষায়, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা হরণ করা হলে তা জাতীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

শেষ মুহূর্তে এসে হুঁশিয়ারি দেন ইশরাক: ‘আরেকটি স্বৈরাচার তৈরি হতে দেব না। যদি হয়, তবে শেখ হাসিনার মতো জবাবের জন্য আমরা প্রস্তুত।’ পুরো পরিস্থিতি বিএনপির তরফে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক বার্তা ছুড়ে দিয়েছে, যেখানে মেয়র পদ কেবল প্রতীক, মূল লড়াই জাতীয় নির্বাচন ঘিরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *