ধানমন্ডিতে মব নিয়ন্ত্রণ করে পুরস্কার পেলেন সেই ওসি

ঢাকার ধানমন্ডিতে সাম্প্রতিক এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় ক্যশৈন্যু মারমা (Kayshinyu Marma) নামের পুলিশ কর্মকর্তা পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। তাকে সম্মানিত করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী (DMP Commissioner Sheikh Mohammad Sajjat Ali)।

বুধবার (২১ মে) ডিএমপি সদর দপ্তরে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ক্যশৈন্যুকে ডেকে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন কমিশনার সাজ্জাত আলী। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, উত্তেজিত জনতাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী সামাল দিয়ে ওসি ক্যশৈন্যু যেভাবে কাজ করেছেন, তা পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও অনুসরণীয় হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন কমিশনার।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯ মে রাতে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাড়ি ঘেরাও করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও অন্যান্য বিক্ষুব্ধ জনগণ। অভিযোগ ছিল, গোলাম মোস্তফা ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’। উত্তেজিত জনতা প্রথমে বাসার দারোয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়।

পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার কয়েকজনের সঙ্গে পুলিশের বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, একজন উত্তেজিত তরুণ ধানমন্ডির ওসি ক্যশৈন্যুর সঙ্গে উচ্চস্বরে তর্কে লিপ্ত হন। তিনি বলেন, “আপনি গ্রেপ্তার করছেন না কেন?”

ওই পরিস্থিতিতে ওসি ক্যশৈন্যু সুকৌশলে উত্তেজনা প্রশমিত করেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি আরও নজরে আসে। পরদিন পুলিশের নির্দেশে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হলেও মঙ্গলবার বিকেলে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে ওসি ক্যশৈন্যু গণমাধ্যমকে জানান, “একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে মব গঠন করে বাসায় হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে বলি—কোনো মামলা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়। এরপরও তারা খারাপ আচরণ শুরু করে।”

তিনি আরও বলেন, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে—‘মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না’। সেই নীতির বাইরে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তিদের একজন ছিলেন সাইফুল ইসলাম রাব্বি (Saiful Islam Rabbi), যিনি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক ছিলেন। পরে এই আন্দোলনের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “নৈতিক স্খলনজনিত কারণে রাব্বিকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও ছাত্র আন্দোলনের চেহারাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ওসি ক্যশৈন্যুর শান্তিপূর্ণ মব নিয়ন্ত্রণের কৌশল এখন পুলিশের ভিতরেই উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *