নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-কে ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যে এবার মুখ খুললেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal)। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস এমন এক ধরণের ‘শান্তি’র পরিবেশ তৈরি করেছেন যেখানে মানুষ মার খেলেও মুখ খুলতে পারে না।
মাসুদ কামাল বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুনেছি বিএনপির নেতাকর্মীরা নদীর চরে, জঙ্গলে গিয়ে থেকেছে। তাদের ঘরেও থাকতে দেওয়া হয়নি। আমরা তখন আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার বলেছি, ফ্যাসিবাদী বলেছি এবং তাদের তাড়িয়েছি।” এরপর তিনি যোগ করেন, “এখন ড. ইউনূস যেভাবে আচরণ করছেন, তাতে তাকেও বিদায় নিতে হবে, যদিও তিনি হয়তো তা পারবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, কিন্তু তার সময় কি দেশে শান্তি বেড়েছে? এখন কেউ যদি রাস্তায় হাঁটে এবং তাকে স্বৈরাচারের দোসর বলে মারধর করে, কেউ এগিয়ে আসে না। এমন বাস্তবতাকে আপনি কি শান্তি বলবেন?”
ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মাসুদ কামাল। তার মতে, “উনার বোঝা উচিত, উনি কী করছেন। তার সামনে সুযোগ ছিল নিজেকে আরও উচ্চতায় নেওয়ার, যদি তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।” কেন করেননি? এই প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ কামাল বলেন, “উনি রাজনীতি বোঝেন না।”
ড. ইউনূসের একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে মাসুদ কামাল জানান, “২৫ আগস্টের এক বক্তব্যে উনি বলেছেন— ‘আমরা অন্য জগতের মানুষ’। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, অন্যরা ভুল করলে আপনি কিছু বলেন না? তখন তিনি উত্তর দেন— ‘আমি নিজেই ভুল করি, আমি নিজেই তো বুঝি না।’ অর্থাৎ, একজন ‘অনুরোধে ঢেকি গেলার’ মানুষ হয়েও বাস্তব দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আছেন।”
সাক্ষাৎকারের শেষদিকে মাসুদ কামাল বলেন, “যদি প্রশ্ন আসে, সেই সময়ে ড. ইউনূসের বিকল্প ছিল কি না, সেটা উনার দেখার বিষয় না। শেখ হাসিনাও বলতেন— বিকল্প নেই। কিছু চাটুকার বলতেন— আপা আপনি অমর, আপনি না থাকলে দেশ চলবে না। কিন্তু আজ শেখ হাসিনা নেই, দেশ চলছে। পৃথিবীতে অপরিহার্য কেউ নয়। যারা এটা মানতে পারে না, তাদের মনেই স্বৈরাচার বাস করে।”
মাসুদ কামালের এ বক্তব্য সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্বকে এভাবে প্রকাশ্যে সমালোচনা করাকে কেউ কেউ ‘সাহসী’, আবার কেউ কেউ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত’ বলেও অভিহিত করছেন।