‘আওয়ামী লীগ-জামায়াতের পুরনো সখ্যতা’ তুলে ধরে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান প্রশ্ন রুমিন ফারহানার

বিএনপির সংস্কারমূলক অবস্থান, আওয়ামী লীগ-জামায়াত সম্পর্ক এবং বর্তমান সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (Rumeen Farhana)। সরকারের ‘সংস্কারমুখী’ তৎপরতা আসলে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিকল্পনার অনুকরণ বলে দাবি করেন তিনি।

রুমিন বলেন, “জামায়াত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক নতুন নয়—এটা বহু পুরনো। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তারা একসঙ্গে অংশগ্রহণ করে এরশাদ সরকারকে বৈধতা দেয়। এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পরও ১৯৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত যৌথভাবে আন্দোলন করেছে।” তিনি আরো বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পরে জামায়াতের আমীরের মুখে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কিছুটা সহনশীলতা।”

সরকারের সাম্প্রতিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় রুমিন বলেন, “এই সরকার এখন এমন সব সংস্কারের কথা বলছে, যা বহু আগেই বিএনপি সামনে এনেছে। অথচ এখন বলা হচ্ছে সরকার বিএনপিমুখী হয়ে পড়েছে—এটা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia) উপস্থাপন করেছিলেন ‘ভিশন ২০৩০’। এরপর তারেক রহমান (Tarique Rahman) দেন ২৭ দফা প্রস্তাবনা এবং পরে একটি যৌথ উদ্যোগে আসে ৩১ দফা পরিকল্পনা—যেগুলোর অনেক অংশ সরকারের বর্তমান কর্মসূচির সঙ্গে মিল রয়েছে।

সংস্কার ইস্যুতে বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে রুমিন বলেন, “দুদকের সংস্কারসংক্রান্ত ৪৭টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৪৬টিতেই বিএনপি একমত। প্রশাসনিক সংস্কারে ২০৮টির মধ্যে ১২৭টিতে, বিচার বিভাগের ৮৯টির মধ্যে ৬৮টিতে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার ২৪৩টির মধ্যে ১৪০টিতে বিএনপি সম্মতি দিয়েছে।” তিনি যোগ করেন, “এখানেই শেষ নয়—সংস্কার মানে মতভেদ সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলা। আমরা এমনই এক রাজনৈতিক পরিবেশ চেয়েছি যেখানে সবাই ‘Agree to disagree’ করতে পারে।”

রুমিন ফারহানা আরও বলেন, “বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বহু ছাড় দিয়ে মধ্যপন্থা নিয়েছে। কিন্তু যখন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে দলটিকে আরও ছাড়ে বাধ্য করার চেষ্টা হয়, তখন সেটা রাজনৈতিক জুলুমে রূপ নেয়।”

নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে রুমিন বলেন, “বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র চায়—এটা নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে, তখন থেকেই আমরা বলে আসছি, নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই। গত ১৭ বছর ধরে দলটি গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, এবং ভবিষ্যতেও সেটাই বলবে—এটাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা।”

টকশোর আলোচনায় রুমিন একটি বার্তা স্পষ্টভাবে দেন—বিএনপি এখনো গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বাস্তবধর্মী সংস্কার চায়। তবে সেই চেষ্টাকে বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপিকে কোণঠাসা করা হচ্ছে—এটাই দেশের রাজনীতির সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *