নওশেদকে জামায়াত নেতা বলছে স্ত্রী, পুলিশ দাবি করছে শ্রমিক লীগ নেতা

চট্টগ্রামে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নওশেদ জামাল (Nawshed Jamal)–কে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। পুলিশের দাবি তিনি একজন শ্রমিক লীগ নেতা, অথচ তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নওশেদ আসলে জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) রুকন এবং দক্ষিণ বাগমনিরাম সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। এর আগে চাঁদা না পেয়ে ‘মব’ তৈরি করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার বিরুদ্ধে।

শনিবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর দায়ের করা অভিযোগপত্রে রিয়াজুল জানান, তার স্বামীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি ‘মব’ তৈরি করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement)-এর নগর কমিটির সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে নিজাম তার স্বামীর কাছে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগ্রাবাদে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অফিসের পথে ১০-১৫ জনের একটি দল নওশেদকে পথরোধ করে মারধর করে এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত তাকে কোতোয়ালির একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। রিয়াজুলের দাবি, এই পুরো পরিকল্পনার পেছনে একটি অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে, যা ঘটেছে পতেঙ্গা ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে বসে।

চিঠিতে রিয়াজুল একটি ভিডিওর কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে দেখা যায় নিজাম উদ্দিন ফোনে কথোপকথনের সময় বলেন, “পুলিশ পারে না এমন কিছু নাই… আপনি যদি চান ওই তিনজনকে… করে দিতে পারবে… দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন।” ছয় মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপ এখন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিতর্ক।

এদিকে নিজাম উদ্দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, ভিডিওটি চার-পাঁচ মাস পুরোনো এবং এটি পতেঙ্গা থানার এলাকার দৃশ্য। তার ভাষ্য, ভিডিওতে কোথাও চাঁদা দাবির প্রমাণ নেই, বরং একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এটিকে ‘চাঁদাবাজি’র অভিযোগে রূপ দিচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন, “আমি শুধু বলেছি, যদি আওয়ামী লীগের কেউ হয় তবে ব্যবস্থা নিন, না হলে ছেড়ে দিন।” কিন্তু এখন উল্টো দাবি করা হচ্ছে, তিনিই পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম (Mahmuda Begum) জানান, এ ধরনের অভিযোগ সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানায় বা ডিসি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রয়োজন হলে পুলিশ কমিশনার তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবেন।

কোতোয়ালি থানার (Kotwali Police Station) ওসি মো. আবদুল করিম বলেন, “টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে।”

অন্যদিকে, মেঘনা পেট্রোলিয়াম (Meghna Petroleum)-এর একাধিক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের আগস্টে শ্রমিক লীগের নেতারা কারাগারে যাওয়ার পর শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই নওশেদকে রাজনৈতিকভাবে ‘টার্গেট’ করে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

সার্বিকভাবে, ঘটনাটি কেবল একটি পুলিশি গ্রেপ্তার নয়; বরং তা রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এবং অর্থনৈতিক লেনদেনকে ঘিরে একটি ঘনচাপা বিতর্কে রূপ নিয়েছে—যার শেষ কোথায়, তা এখনো অনিশ্চিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *