ভোটের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও তরুণদের একটা বড় অংশ মনে করছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, তরুণরা মনে করেন, বিএনপি ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে জামায়াত, যারা পাবে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট। অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য দল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে। আর গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেতে পারে।
জরিপে জানানো হয়, ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, মব জাস্টিসের ঘটনা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। সোমবার (৭ জুলাই) মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে জরিপের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
‘যুবসমাজের পরিবর্তন: চাকরি, শিক্ষায় এবং জুলাই আন্দোলনের পর বদলানো রাজনৈতিক দৃশ্যপটে চলার পথ’ শীর্ষক এই জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের মধ্যে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিলেন নিরপেক্ষ। তারা কোনো মত দেননি। আর ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন দৈনন্দিন জীবনে মব জাস্টিস প্রভাব ফেলছে না।
১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে পরিচালিত জরিপটিতে মোট ১৭টি কেস স্টাডি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে তরুণদের অভিজ্ঞতা ও মতামতের বিভিন্ন দিকগুলো উঠে আসে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ইস্যু দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলছে, তা জানার জন্য জরিপে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখা হয়। আগুন লাগানো, ডাকাতি ও চুরির মতো ঘটনার প্রসঙ্গে ৮০ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; ১২ দশমিক ১ শতাংশ নিরপেক্ষ এবং ৭ দশমিক ৭ শতাংশ একমত নন।
সরকারি পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে হেরফের বা বিলম্ব প্রসঙ্গে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ একমত প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক সহিংসতা ও ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট গ্রেফতার ও মামলার কারণে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ।
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে বলে মত দিয়েছেন ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ, ২৮ দশমিক ২ শতাংশ নিরপেক্ষ এবং ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ একমত নন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রাইহানের নেতৃত্বে গবেষণা দল এই জরিপ পরিচালনা করেন। গবেষণা দলে আরও ছিলেন একরামুল হাসান, শাফা তাসনিম, এশরাত শারমিন, নীলাদ্রি নভিয়া নভেলি এবং মো. রজিব।
এই জরিপ কেন ভোটের আসল চিত্র প্রতিফলন করে না
তবে এই জরিপে অংশ নিয়েছেন কেবলমাত্র ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২,০০০ জন তরুণ। অথচ বাংলাদেশের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি, যার বড় একটি অংশ ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে।
বিএনপির সংগঠন ও ভোটব্যাংক কেবল তরুণদের মধ্যে সীমিত নয়—এটি বয়স্ক, গ্রামীণ এবং প্রবাসী ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয়। তাই এমন সীমিত বয়সভিত্তিক জরিপ পুরো ভোটার জনমতের প্রতিচ্ছবি হতে পারে না।
এছাড়াও এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে জুলাই আন্দোলনের পরপরই, যখন দেশের রাজনীতি ছিল উত্তপ্ত। ফলে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষণিক আবেগে মত দিয়েছেন, যা বাস্তব ভোটব্যবহারকে প্রতিফলিত করে না।
এই মুহূর্তে কিছু অংশের সহানুভূতি নতুন দল বা ধর্মভিত্তিক দলের দিকে চলে যেতে পারে, কিন্তু বাস্তব ভোটের দিন সাধারণ মানুষ সুপ্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে বিএনপিকেই ভোট দেবে।
এছাড়াও জরিপে জামায়াত ও এনসিপির মতো ছোট ও সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটশক্তিকে বিএনপির সঙ্গে এক কাতারে তুলে ধরা হয়েছে, যা একটি বিভ্রান্তিকর সমতুল্যতা সৃষ্টি করে।
জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক দল অন্যদিকে এনসিপি সদ্য গঠিত। এদের সঙ্গে বিএনপির ঐতিহাসিক ভিত্তি ও দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামোর তুলনা করা অনুচিত।
এছাড়া সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ভোটাধিকার নেই এমন অংশগ্রহণকারীর অন্তর্ভুক্তি।এই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের, যারা ভোট দেওয়ার যোগ্যই নয়।
নির্বাচনী জরিপে অযোগ্য ভোটারদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা ভুল। এটি ভোটের প্রকৃত ফলাফলের পূর্বাভাস দিতে পারে না। শুধুমাত্র যোগ্য ভোটারদের মতামত বিবেচনায় নিলে বিএনপির ভোটশক্তি আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতো।
“এই জরিপে যে প্রাথমিক চিত্র উঠে এসেছে তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। জরিপের সময়, পদ্ধতি ও অংশগ্রহণকারীদের গঠন—সব কিছুতেই সীমাবদ্ধতা আছে। এত কিছু সত্ত্বেও বিএনপি শীর্ষে, যা প্রমাণ করে—জনগণের আসল আস্থা এখন বিএনপির দিকেই। দেশের সর্বস্তরের মানুষ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।”