পিআর পদ্ধতি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক: ভিডিও কনটেন্টে উভয় পক্ষের প্রচারণা

বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে পিআর পদ্ধতি (Proportional Representation system)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্টে পিআর পদ্ধতির পক্ষে যেমন যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে, তেমনি এর বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সমালোচনাও উঠে আসছে। এসব ভিডিও পর্যালোচনা করেছে ডিসমিসল্যাব (Dismislab), যারা প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রচারণার ধরন শনাক্তে কাজ করছে।

পিআর পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি: ‘ভোটের ইনসাফ’

২৯ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে নির্মিত এক চরিত্র বলছে, “আনুপাতিক মানে যার যত ভোট, তার তত আসন।” তার বক্তব্যে একজন সাড়া দিয়ে বলেন, “ও, তাই নাকি? এইটা তো ইনসাফ।”

একইভাবে ৩০ জুনের আরেকটি ভিডিওতে একজন তরুণ এবং একজন বয়োজ্যেষ্ঠের মধ্যে সংলাপে উঠে আসে: “দাদা, আমি প্রত্যেকবার ভোট দিই, কিন্তু আমার ভোটটা নষ্ট হয়ে যায়।” উত্তরে অপর ব্যক্তি বলেন, “কারণ, আমরা পিআর সিস্টেমে ভোট দিচ্ছি না। যদি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হয়, প্রতিটি ভোটের হিসাব থাকে, প্রতিটি দল সংসদে অংশ পায়।”

ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, পিআর পদ্ধতির পক্ষে তৈরি ভিডিওগুলোতে একাধিক দৃশ্য ও সংলাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মতামত উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বিষয়টি ব্যাখ্যামূলক ও তথ্যভিত্তিক বলেই মনে হয়েছে।

পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ ও শ্লেষ

অন্যদিকে, পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে তৈরি ভিডিওগুলোতে রয়েছে তীব্র ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন। ডিসমিসল্যাব বলছে, এসব ভিডিওতে সাধারণত একক দৃশ্য এবং কটাক্ষমূলক ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ১ জুলাইয়ের একটি ভিডিওতে একজন ব্যক্তি বলেন, “অযোগ্যরা করছে জোট, পিআর পদ্ধতিতে দিতে ভোট। ভোট দিব নোয়াখালী, এমপি হবে পটুয়াখালী।” ভিডিওর নিচে ‘ভিও’ (VIO) নামের একটি লোগোও দেখা যায়, যা কোনো প্রচারণা প্ল্যাটফর্মের ইঙ্গিত বহন করতে পারে।

ডিসমিসল্যাব ব্যাখ্যা করেছে, এই ভিডিওতে মূল যুক্তি হলো—পিআর পদ্ধতিতে সরাসরি একজন ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ভোটাররা ‘নিজ এলাকার’ প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন না। পরিবর্তে দলীয় ভিত্তিতে সংসদ সদস্য বাছাই হবে।

২ জুলাইয়ের একটি ভিডিওতে এই পদ্ধতির নির্বাচনকে সরাসরি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) ব্যর্থ হওয়ার পরও মোট নম্বরে পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে তুলনা করে উপহাস করা হয়। এখানে ইঙ্গিত ছিল, যোগ্যতা নয় বরং সংখ্যা দিয়ে জয় নিশ্চিত হওয়ার পথ তৈরি হবে পিআর পদ্ধতিতে।

পিআর পদ্ধতি আসলে কী?

উল্লেখ্য, পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যক্তিপর্যায়ে প্রার্থী নির্বাচন করা হয় না। ভোটাররা নির্দিষ্ট প্রার্থীর পরিবর্তে দলীয় প্রতীকে ভোট দেন। একটি দল জাতীয়ভাবে যত শতাংশ ভোট পায়, সে অনুপাতে তারা সংসদে আসন পায়।

এ পদ্ধতির সমর্থকরা বলেন, এতে প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন হয় এবং ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলোরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। আর বিরোধীরা বলছেন, এতে স্থানীয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পাওয়া যায় না, এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *