দীর্ঘদিনের আড়াল ভেঙে সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি চুপ্পু

প্রায় ১১ মাসের দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে অবশেষে একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে এলেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পু (President Md. Shahabuddin Chuppu)। সোমবার তিনি উপস্থিত হন বাংলাদেশ সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (President Guard Regiment – PGR)-এর ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে।

গত এক বছরে ঈদের নামাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাকে জনসমক্ষে দেখা না গেলেও এবার এই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি অনেকের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ: রাজনৈতিক বার্তা?

বঙ্গভবনের বাইরে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি গত কয়েক মাসে ছিল সীমিত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজেও তাকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে পিজিআরের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে এক প্রকার নতুন বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

এর আগের বছর, পিজিআরের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপস্থিত ছিলেন পলাতক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুকরণে এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি, যা অনেকে ‘উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি’ হিসেবে দেখছেন।

রাষ্ট্রপতি কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন করে পরিদর্শন বইয়ে সই করেন এবং পিজিআর-এর অফিসার ও জেসিওদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করেন।

শহিদ ক্যাপ্টেন হাফিজ হলে পিজিআরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, “পিজিআর-এর একাগ্রতা, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ এবং পেশাগত দক্ষতা দেশের নিরাপত্তায় অপরিসীম অবদান রাখছে।” তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের স্মরণ করেন এবং বিশেষভাবে রেজিমেন্টের ৫ জন শহীদ সৈনিকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

আইএসপিআরের তথ্য ও সামরিক উপস্থিতি

আইএসপিআর (ISPR)-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ওই দিন পিজিআর সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং পিজিআর কমান্ডার। এরপর রাষ্ট্রপতি পিজিআর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন নেতৃত্বের প্রতি সর্বদা অনুগত থেকে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম. নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, সেনাবাহিনীর সিজিএস, পিএসও (এএফডি), কিউএমজি, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবসহ সামরিক ও অসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

প্রতীকী গুরুত্ব বহন করছে এই অংশগ্রহণ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতির এই উপস্থিতি শুধু একটি সামরিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নয়, বরং তা দীর্ঘ সময় পর তার সক্রিয়তা এবং প্রশাসনিক সংহতির বার্তা বহন করছে। বিশেষ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তার অংশগ্রহণ রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ও প্রতীকী ভূমিকার দৃশ্যমান প্রকাশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *