“আগে ছাত্রলীগই ছিলাম, এখন ছাত্রশিবির করি” – চবি হল শাখার সভাপতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রশিবির (Islami Chhatra Shibir)–এর সোহরাওয়ার্দী হল শাখার বর্তমান সভাপতি আবরার ফারাবীর অতীত রাজনীতি ঘিরে নেটমাধ্যমে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League)–এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি, এমন স্বীকারোক্তি এবং তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পুরনো বিতর্কিত পোস্টগুলো সম্প্রতি ভাইরাল হয়।

নেটিজেনদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন—যিনি একসময় জামায়াত-শিবির বিরোধী পোস্ট লিখতেন, তিনিই আজ ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে?

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশট থেকে দেখা যায়, ‘N U Abrar Farabi’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে ফারাবী একসময় জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করেছেন। এমনকি ২০২১ সালে তিনি জামায়াত-শিবিরকে ‘খুনী’ আখ্যা দিয়ে শহীদ ছাত্রনেতা আলী মরতুজা চৌধুরীর হত্যার বিচার দাবি করেন।

একাধিক পোস্টে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন (A J M Nasir Uddin) এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। পাশাপাশি ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়ের সঙ্গে ‘প্রিয় ভাই’ সম্বোধনে পোস্টও দিয়েছেন তিনি।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরের একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “চবি ছাত্রলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ড. রবিউল হাসান ভূইয়া স্যার… আজ যখন দেখি তার মত ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে, তখন কষ্ট লাগে।”

এতকিছুর পরও আজ তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতি। এ বিষয়ে ফারাবী বলেন, “২০২২ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত আমি ছাত্রলীগেই ছিলাম। এরপর রাজনীতি ছেড়ে ২০২৩ সালে ছাত্রশিবিরে যুক্ত হই।”

তিনি জানান, হল ছাড়ার পর বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সক্রিয় ছিলেন, যার মধ্যে মহানবী (স.)-কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে মানববন্ধনের মতো কর্মকাণ্ড ছিল। এসব নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয় এবং একপর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

আবরার ফারাবী বলেন, “ছাত্রলীগ করেছি এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু ২০২২ সালের পর থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তখন থেকে আমি শিবিরের আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলেছি। আগে ছাত্রলীগই ছিলাম, এখন ছাত্রশিবির করি”

চবি ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “যেসব পোস্ট নিয়ে বিতর্ক, সেগুলো মূলত ২০২১-২২ সালের। তখন তিনি ছাত্রলীগে ছিলেন। পরবর্তীতে আমাদের সংগঠনে নিয়ম মেনে মানোন্নয়ন করে তিনি দায়িত্বে আসেন। এমন নয় যে তিনি হঠাৎ করে যুক্ত হয়েছেন। বরং আগস্টের আগেই সোহরাওয়ার্দী হলের দায়িত্ব নিচ্ছিলেন এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।”

নেটিজেনদের একাংশ এটিকে ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদ’ হিসেবে দেখলেও অন্যরা বলছেন, আদর্শ বদল নতুন কিছু নয়, তবে পুরনো অবস্থান ভুল স্বীকার করাই বিবেচনার বিষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *