বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BMU) ডেন্টাল অনুষদের ডিন ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্থ (Dr. Sakhawat Hossain Saynth)। তিনি মনে করছেন, সরকার যদি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে, তাহলে জরুরি অবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর সেই সুযোগে বাংলাদেশে আবারও ভারতীয় প্রভাব (India) ফিরে আসতে পারে।
ডা. সায়ন্থ স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর এখন কোনোভাবেই নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাবনায় সায় দেওয়া উচিত নয়। বরং তাদের উচিত হবে সংগঠিত ও কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। তার মতে, “সরকার যদি এই চাপেও নির্বাচনের পথে না আসে, তাহলে তা দেশ ও জাতির জন্য বিপর্যয়কর হবে। প্রশাসনের ভেতরে থেকেও হয়তো আর আগের মতো সহযোগিতা পাওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সরকার দুইটি পথের একটিতে যেতে পারে— হয় পদত্যাগ করবে, নয়তো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবে। আর যদি জরুরি অবস্থা জারি হয়, তাহলে সেখানে ভারতীয় আধিপত্য ফিরে আসার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। তবে তিনি এই দায় শুধু সরকারের কাঁধে চাপিয়ে দেননি। তার মতে, যারা বিএনপি ও বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ করতে চায়— যেমন জামায়াত বা অন্য কিছু রাজনৈতিক শক্তি— তারাও এই দায় এড়াতে পারবে না।
রাজনীতিতে চাতুর্য ও অতি হিসেব-নিকেশে যারা নিজেদের স্বল্পমেয়াদি স্বার্থ দেখছে, তাদের জন্যও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। “এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে শেষ পর্যন্ত কেউই রক্ষা পাবে না,” বলেন ডা. সায়ন্থ। তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে দেশ ফের এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এই বিশ্লেষক। তার মতে, বিএনপির জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায় করা। “সরকার যদি নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে করতে চায়, তাহলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে,” বলেন তিনি। “নভেম্বর পেরিয়ে গেলে আর সময় থাকবে না— তখন আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।”
রাজনৈতিক মাঠে অন্য দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনার সুরে কথা বলেন ডা. সায়ন্থ। তিনি বলেন, কিছু দল— বিশেষ করে এনসিপি (NCP) ও জামায়াত (Jamaat)— এখন নিজেদের কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে বিএনপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এতে বিএনপি একধরনের ‘মাইনকা চিপায়’ পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে ডা. সায়ন্থ ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস ২০০৬ সালেই ‘কিংস পার্টি’ তৈরির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং এখনো আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, এই ধরণের পরিকল্পনা বাংলাদেশের রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ডা. সায়ন্থ। তিনি বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে।” এই প্রেক্ষাপটে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে পারে উত্তরণের একমাত্র পথ।
শেষদিকে ডা. সায়ন্থ বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এখন উচিত হবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমিয়ে নির্বাচনের তারিখ, আচরণবিধি ও রোডম্যাপ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো। একই সঙ্গে সরকারের উচিত হবে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন হবে এবং সেই অনুযায়ী তফসিল প্রকাশ করা হবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “সরকার যদি এই স্পষ্টতা না দেয়, তাহলে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি আরও বাড়বে এবং গণতন্ত্রের জন্য এটি হবে বিপজ্জনক। যেকোনো সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। তারা দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল। তাদের বাদ দিয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এবার যদি আন্দোলনের অবকাশ তৈরি হয়, তাহলে তা হবে অনেক ভিন্ন রকমের— কারণ, জনগণের ক্ষোভ এবার আগের চেয়ে অনেক বেশি।” তার মতে, এখন সময় এসেছে একটি সৎ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের ইতি টানার। অন্যথায় দেশের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে উঠবে।