অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যারা নিজেদের খবরদারি বহাল রাখতে চায়, ফায়দা হাসিল করতে চায় এবং আখের গোছাতে চায় তারা নির্বাচন চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার চায়। যারা অস্ত্রের মুখে সরকার পরিচালনার চিন্তা করেন, তারা নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করতে চাইছেন।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত সমাবেশ এবং শহীদ পরিবার ও নির্যাতনের শিকার পেশাজীবীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে দেশে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক অনুপাতে) নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি তুলছে। কিন্তু তা বাংলাদেশের বাস্তবতা ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী। এটি বিভ্রান্তিমূলক সমাজ ও রাজনীতির বিকাশের পথ খুলে দিতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ একটি বিষয়ে কথা বলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে যারা বন্দুক রেখে নিজেদের খবরদারি বহাল রাখতে চায়, সরকারের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা হাসিল করতে চায় এবং নিজেদের আখের গোছাতে চায়, তাদেরই আমরা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুকৌশলে বাধা সৃষ্টি করতে দেখছি। এ বিষয়টি এখন ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সামনে আসছে।
জুলাই শহীদদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হওয়াকে ভবিষ্যতের ইতিহাসে ‘চূড়ান্ত ব্যর্থতা’ হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, দীর্ঘ এক বছরেও শহীদদের সংখ্যা চূড়ান্ত বা তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারা, বিষয়টি ভবিষ্যতের ইতিহাসে হয়তো আমাদের সবার জন্য একটা চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্বকে পক্ষপাতদুষ্টভাবে প্রচার করা গেলেও শহীদদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নে সে রকম আন্তরিকতা দেখা যায়নি। এটা থাকলে আমরা হয়তো এতদিনে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেতাম।
তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকার পরিচালনায় যে কার্যক্রম চলছে, সেখানে অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর সুস্পষ্ট তালিকা থাকা উচিত। রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে বারবার নতুন ইস্যু সংযুক্ত হলে মৌলিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
শিক্ষাব্যবস্থার সংকট নিয়েও তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত এক বছরের মধ্যেও একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা যদি ক্যাম্পাসগুলোকে অন্ধকারে রেখে আলোকিত বাংলাদেশের চিন্তা করি, সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত?
তিনি শহীদদের স্মরণ করে বলেন, নিজের জীবন দিয়ে যারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অবিরাম। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন শহীদদের ত্যাগ ছিল, তেমনই ২০২৪-এর আন্দোলনেও যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা স্বাধীনতা রক্ষার যোদ্ধা।
ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য দোয়া এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বক্তব্য শুরু করেন তারেক রহমান। শুরুতেই তিনি বলেন, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শোক ও দোয়া রইল।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পেশাজীবী নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য দেন।