মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (Milestone School and College)–এর পাশে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজদের সংখ্যা নিয়ে তৈরি বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলেছেন দেশের খ্যাতিমান গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ (Prince Mahmud)। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি সোজাসাপ্টা প্রশ্ন তুলেছেন, যেসব পরিবারের সন্তানের লাশ এখনো মেলেনি, তাদের নাম প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তার কথায়, “লাশ গুম হইছে বুঝলাম, অভিভাবকরাও কি গুম হয়ে গেছে?” — এই বক্তব্য দিয়ে তিনি ঘুরে ফিরে ‘লাশ গুম’ সংক্রান্ত গুজব ও প্রশ্নগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বচ্ছভাবে মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, “বিমান দুর্ঘটনার প্রথম দিন কিছুটা সমন্বয়হীনতা ছিল। প্রথমে হয়তো ঘটনার ভয়াবহতা সবাই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি। এমন ভয়াবহ ঘটনায় সাধারণ মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে নিহত ও আহতদের সঠিক তালিকা দিতে দেরি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গতকাল পর্যন্ত তো একটা স্পষ্ট হিসাব দেওয়া যেত। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানুষের উদ্বেগ তো থাকবেই। তারচেয়েও বড় কথা, এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দ্রুত ও সঠিকভাবে জনগণকে তথ্য জানানো উচিত।”
রাজনীতি না, মানবিকতা আগে
এই ইস্যুতে মঙ্গলবার আরও একটি পোস্টে প্রিন্স মাহমুদ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তীব্র সমালোচনা করে লেখেন, “আজ রাজনৈতিক দোকান বন্ধ রাখেন, চ্যালা–চামুণ্ডা নিয়ে হাসপাতালে যায়েন না। এইবার অন্তত মাফ করেন। কাজের মানুষদের কাজ করতে দেন। পারলে চেহারা না দেখায় পেছনে বসে সাহায্য করেন…”
এই মন্তব্যে তার একপ্রকার হতাশাও প্রকাশ পেয়েছে—এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক বিভাজন বা জনসমক্ষে থাকার প্রতিযোগিতা থেমে নেই। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সময়েও রাজনীতি এবং ‘শো-অফ’ সংস্কৃতি যে ক্ষতি করে, সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় ইস্যুতে বরাবরই সরব
সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ এর আগেও জাতীয় নানা সংকট ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। গত বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনেও তাকে সরবভাবে দেখা গেছে। তার বক্তব্যে বরাবরই থাকে স্পষ্ট রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান।
তবে এবার তার কণ্ঠে আরও কিছুটা ধৈর্যের, কিছুটা ক্ষোভের, আর কিছুটা আশাহীনতার সুরও ধরা পড়ছে। গুজব আর অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত মানুষের হয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রকে সঠিক তথ্য দেওয়ার দায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি—আবেগ দিয়ে নয়, যুক্তি আর দায়িত্ববোধ দিয়ে।