আল জাজিরার তথ্যচিত্রে হাসিনা-ইনানের গোপন ফোনালাপ প্রকাশ

জুলাই আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের প্রকাশ্য নির্দেশ’ দিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তার এমন গোপন ফোনালাপসহ একাধিক কল রেকর্ডিং পেয়েছে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সম্প্রতি ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন : উন্মোচিত হচ্ছে শেখ হাসিনার গোপন আদেশনামা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। এতে শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের একটি ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়েছে। ৫০ মিনিটের ওই প্রতিবেদনের ৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের একটি ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়।

হাসিনা ও ইনানের ওই ফোনালাপটি হয় ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে। যেখানে শেখ হাসিনা ইনানের কাছে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি জানতে চান। ওই সময় ইনান হলগুলো অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অধিকাংশই ফাঁকা হইছে। তবে এরপরও ভিতরে পুলিশের কাজ করতে হবে।’

এই ফোনালাপের আগে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। আল-জাজিরার দাবি, এ ঘটনার দুই দিন পর শেখ হাসিনা ও ইনানের মধ্যে এই ফোনালাপ হয়। সেদিনের ওই ফোনালাপে ইনান শেখ হাসিনাকে জানান, তাদের দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাই আতঙ্কিত থাকায় তারা দল থেকে পরিষ্কার নির্দেশনা পাচ্ছিল না। তাই সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন তিনি। ফোনালাপে ইনান বলেন, ‘আপনারে বারবার ফোন দিচ্ছি, আপনি কিছু মনে কইরেন না।’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, আমি কেন মনে করব। আমি সারারাতই জাগা, কালকেও তো।’ এছাড়াও তিনি বলেন, ‘দক্ষিণে-উত্তরে বলে দিয়েছি, যেখানে যা দরকার তাই করতে।’

পরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এই নেতা হাসিনাকে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠেই ছিল, আপনার নির্দেশনা পাইয়াই সবাই নাইমা গেছে।’ ওই সময় আন্দোলনের পেছনে সন্ত্রাসীরা কাজ করছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তাদের কোনো সুযোগ দিতে চান না বলেও জানান শেখ হাসিনা। পরে বিষয়টিতে জোরালো সম্মতি দেন ইনান। আন্দোলনের সময় এসব ফোনালাপ রেকর্ড করেছে শেখ হাসিনার নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি। এই সংস্থাটি এর আগেও কেবল বিরোধী নেতাদের নয়, বরং হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও নজরদারি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে। এতে শেখ হাসিনার ওই অডিও যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা নয়, সেটি নিশ্চিত হয়েছে আই-ইউনিট। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান। হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ ও সরকারের দমনপীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *