চাঁদাবাজির অভিযোগ, গ্রেপ্তার ও পদত্যাগ—পরপর কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement) সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। রোববার রাজধানীর শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রিফাত রশিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করছি।” তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যনার ব্যবহার করে নামে-বেনামে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে।, যা সংগঠনের মূল লক্ষ্য ও নীতির পরিপন্থী।
তিনি আরো বলেন, “আমরা যখন আত্মপ্রকাশ করেছিলাম, তখনই সতর্ক করেছিলাম—ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি অসাধু উদ্দেশ্যে কিছু করতে চায়, তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।” অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, সংগঠনের পরবর্তী কর্মকৌশল কী হবে, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই ঘোষণার পেছনে মূলত শুক্রবারের একটি বিতর্কিত ঘটনা বড় ভূমিকা রেখেছে। সেদিন আওয়ামী লীগের (Awami League) সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদাব এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চারজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং পরে সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে তাদের স্থায়ী বহিস্কার করা হয়।
পরে এই গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি আলোচিত পোস্ট দেন সংগঠনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গত বছর জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তিনি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তিনি লিখেছেন, “এই চাঁদাবাজির খবর দেখে সবাই অবাক হওয়ার ভান করছেন, এটা বেশ হাস্যকর। এটাই শুধু প্রথমবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল—তাদের শেকড় অনেক গভীরে।”
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভেতর থেকেই আরও হতাশা ও পদত্যাগের ঘোষণা আসতে শুরু করে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মুখপাত্র খাদিজা আক্তার কেয়া শনিবার ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগ করেন। তীব্র অভিমান ঝরে পড়ে তার কথায়: “যার জন্য করলাম চুরি, সেই বলে চোর! এটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যে হবে না, এমন কেউ বলেনি। আজকের পর থেকে এই আন্দোলনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
এই সব বিতর্কের প্রেক্ষাপটে রোববার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন—কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে সংগঠনের অন্য কোনো শাখা বা ইউনিট আপাতত সক্রিয় থাকতে পারবে না।