১২টি বিষয়ে পূর্ণ, ৭ টি আংশিক ঐক্যমত্য হয়েছে, ৩ বিষয়ে আলোচনা হয়নি: অধ্যাপক আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার রূপরেখা তৈরিতে আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ ১২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদসীমা নির্ধারণে একব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—এ বিষয়েও দলগুলো একমত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদসীমা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, “একজন ব্যক্তি তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এই বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় আরও ৭টি বিষয়ে অগ্রগতি হলেও তা এখনো নিষ্পত্তির পর্যায়ে আসেনি বলে জানান তিনি। তবে আলোচনা চলমান এবং ইতিবাচক গতিতে এগোচ্ছে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন আলী রীয়াজ। তিনটি বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা শুরু হয়নি বলেও জানান তিনি।

রবিবার (২৭ জুলাই) রাত সোয়া ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১৯তম দিনের আলোচনার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ড. আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “পুলিশ যেন আইনানুগ ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এ কমিশন পুলিশের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে কাজ করবে।”

কমিশনের কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে তিনি বলেন, ৯ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন ৭৫ বছরের কম বয়সী আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্য সচিব হবেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের নিচে নয় এবং ৬২ বছরের কম বয়সী একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।

কমিশনের বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকবেন—
– সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার একজন করে প্রতিনিধি
– স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের একজন করে প্রতিনিধি
– সচিব পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন)
– জেলা জজ বা হাইকোর্ট বিভাগের তালিকাভুক্ত, অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞ আইনজীবী
– একজন মানবাধিকার কর্মী, যার দেশে ও বিদেশে মানবাধিকার সংস্থায় ন্যূনতম ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে
এই ৯ সদস্যের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী সদস্য থাকবেন বলেও জানানো হয়।

অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, কমিশন ইতোমধ্যে জুলাই সনদের একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে, যা পর্যালোচনার জন্য আগামীকালের মধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে। দলগুলো খসড়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতামত জানালে, তা প্রয়োজন অনুযায়ী খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যদি কোনো মৌলিক আপত্তি না আসে, তবে খসড়াটি নিয়ে আর আলাদা করে বৈঠকে আলোচনা করার প্রয়োজন হবে না।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের মতামত পাওয়ার পর তা খসড়ায় সন্নিবেশিত করে চূড়ান্ত জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হবে। ওই সনদে পটভূমি, প্রাথমিক বক্তব্য, অঙ্গীকার ও প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো যুক্ত করে তা দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হবে। আমাদের এই আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতেই হবে। আলোচনার এ পর্যায় সম্পন্ন করে আমরা প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে চাই।

রবিবারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *