আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রথম ভোটের প্রতীকী আবেদন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ছাত্রদলের আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি আহ্বান জানান, “তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক।”
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদল এই সমাবেশের আয়োজন করে। উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “এই আহ্বান কেবল স্লোগান নয়, এটি হবে একটি আন্দোলন। এই বার্তা পৌঁছে দাও দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে, প্রতিটি নতুন ভোটারের কাছে।”
তারেক রহমান বলেন, “গত দেড় দশকে দেশের ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি নতুন তরুণ ভোটার যুক্ত হয়েছে। অথচ এদের অধিকাংশই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। কারণ, ফ্যাসিবাদী চক্র তাদের সেই অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল। এই নির্বাচনে সেই অধিকার পুনরুদ্ধারের বড় সুযোগ এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির রাজনীতি হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতি। আজকের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা, শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মমুখী করা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করাই হবে আমাদের মূল অঙ্গীকার।”
শিক্ষানীতিতে বাস্তবমুখী পরিবর্তনের ঘোষণা
শিক্ষানীতির বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, “আমরা চাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হোক। স্কুল শেষ করার আগেই যেন তারা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে—এটাই হবে বিএনপির নতুন শিক্ষা দর্শনের মূল কথা।”
তিনি বলেন, “এই লক্ষ্যে আমরা স্কুল পর্যায় থেকেই কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছি, যাতে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেই চাকরির জন্য দৌড়াতে না হয়। বাস্তব দক্ষতা থাকলে কাজ পাওয়া সহজ হবে।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিস্ট চক্র এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছে। কিন্তু বিএনপি শিক্ষাকে কাজে লাগানোর প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে চায়, যেখানে মানবিকতা, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ থাকবে।”
সাহসী ছাত্রদল ও ‘দমাতে না পারার’ চ্যালেঞ্জ
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শুধু ছাত্রদলের ২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিল। শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছিল। তবুও এই সংগঠনে যারা আছেন, তাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।”
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার বক্তব্যের সময় পুরো শাহবাগ চত্বর একাধিকবার মুখর হয়ে ওঠে—“তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক” স্লোগানে।
তারেক রহমান বলেন, “আজকের এই সমাবেশ থেকেই প্রতিজ্ঞা হোক—এই দেশের প্রতিটি তরুণ প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের মর্যাদার জন্য।”
সমাবেশের অন্যান্য বক্তা ও আয়োজন
দুপুর আড়াইটায় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম-এর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাকিবুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান, আসাদুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিব উন নবী খান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
শাহবাগে আয়োজিত এ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগানে অংশ নেন। পুরো আয়োজন জুড়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল—তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে তাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।