ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রদর্শনী ঘিরে ফের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে একটি পোস্টার প্রদর্শন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের ছবি প্রদর্শনের কারণে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর তীব্র আপত্তিতে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হলেও, এরপর নতুন করে সেখানে স্থান পেয়েছে খালেদা জিয়া (Khaleda Zia), সুখরঞ্জন বালি, জিওফ্রে রবার্টসনের মন্তব্য এবং ‘স্কাইপ কেলেঙ্কারি’ সংক্রান্ত তথ্যচিত্র ও পোস্টার।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ইসলামী ছাত্রশিবির ‘আমরাই ৩৬ জুলাই : আমরা থামব না’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রথমে প্রদর্শন করে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি। এই ছবি প্রদর্শন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো, যারা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিক্ষোভের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রক্টোরিয়াল টিম রাতেই সেই ছবিগুলো অপসারণ করে দেয়াল পরিষ্কার করে।
তবে বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে সেই একই স্থানে আবার নতুন বিতর্ক উসকে দেয় ইসলামী ছাত্রশিবির। এবার তারা দেয়ালে টাঙায় যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিচারকাজ নিয়ে বিতর্কিত বিষয়াদি—যেমন খালেদা জিয়ার বিচারবিরোধী বক্তব্য, ‘স্কাইপ কেলেঙ্কারি’ তথ্যচিত্র, ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন (Geoffrey Robertson) এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাক্ষী সুখরঞ্জন বালির বয়ান।
শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক মু. সাজ্জাদ হোসেন খান বলেন, “আমাদের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট—আমরা বিচারক হত্যার বিরুদ্ধে এবং সত্য-ন্যায়ের পক্ষে। আজকের প্রদর্শনীতে আমরা দেখিয়েছি কীভাবে স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আজ থেকে বহু বছর আগেই এই বিচারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকে এই সাজানো বিচারের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে।”
সাজ্জাদ আরও অভিযোগ করেন, “শাহবাগীরা গতকাল যে মব সন্ত্রাস চালিয়েছে, তা প্রমাণ করে তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিতে চাইছে। তারা অতীতে যেমন ফ্যাসিবাদের মুখপাত্র ছিল, এখনো সেই একই রূপে ফিরে আসতে চাইছে।”
এই ঘটনার পর আবারও বিতর্ক তুঙ্গে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মতাদর্শিক মেরুকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ভিন্নমতের প্রকাশ ঘিরে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা নতুন মাত্রা পেল শিবিরের এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে।