শেখ হাসিনার দেশত্যাগকে একমাত্র অর্জন হিসেবে মানতে নারাজ মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন (Muhammad Rashed Khan)। গণঅধিকার পরিষদের এই সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করে বলেছেন, “শুধু হাসিনা দেশ ছেড়েছে—এটুকু আমাদের একমাত্র প্রাপ্তি হতে পারে না।” অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে কাঙ্ক্ষিত কোনো সংস্কার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে রাশেদ খাঁন সরকার পরিবর্তনের পর জনগণের ১২টি প্রধান প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এবং প্রশ্ন করেন—এই প্রত্যাশাগুলোর কতটুকু পূরণ হয়েছে? তার দাবি অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রযন্ত্রে এখনো ফ্যাসিবাদী অবকাঠামো বহাল রয়েছে, এবং কার্যত কোনো কাঠামোগত সংস্কার হয়নি।
ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরা রাশেদের উল্লেখযোগ্য ১২টি অভিযোগ ও প্রত্যাশা ছিল নিম্নরূপ—
- সারা দেশে আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর সঙ্গে জড়িত ‘সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং বিভিন্ন জায়গায় তাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
- শেখ পরিবারভুক্ত কোনো সদস্য আইনের আওতায় আসেননি।
- গত ১৬ বছরে পুলিশের গুলিতে নিহত সাধারণ মানুষের ঘটনার বিচার হয়নি, দায়ীদের গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
- প্রশাসনের মধ্যে যারা ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায়’ সহায়তা করেছে, সেই ডিসি, এসপি, সচিবরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
- পুলিশের সংস্কার বা ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
- ডিজিএফআই (DGFI), এনএসআই (NSI)-এর মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনো জবাবদিহিতা হয়নি, বরং তারা আগের মতোই ক্ষমতাবান।
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের প্রভাবশালী ক্যাডাররা শিক্ষক ও প্রশাসনে ঢুকে আছে; তাদের কোনো অপসারণ হয়নি।
- অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এখনও কর্মরত; কোনো বরখাস্তের নজির নেই।
- হাসিনাবান্ধব মিডিয়া ও সাংবাদিকরা অপরিবর্তিত; মিডিয়া সংস্কারে উদ্যোগ নেই।
- বিচার বিভাগ, সচিবালয়, দপ্তর—সবখানে ‘আওয়ামী সেটাপ’ বহাল; সেখানে সংস্কারের কোনো চেষ্টাই নেই।
- গত ১৬ বছরে তরুণ প্রজন্ম ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছে—তাদের জন্য কোনো ‘মেন্টাল কাউন্সিলিং’-এর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
- শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে কাঠামোগত সংস্কার বা পরিবর্তনের পথে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এই ১২টি প্রত্যাশা পূরণ না হওয়াকে কেন্দ্র করেই রাশেদ প্রশ্ন তোলেন—”এই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে আমরা কী পেলাম?” তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, শুধু একটি নেত্রীর দেশত্যাগ কোনো গণঅভ্যুত্থানের পরিপূর্ণ সফলতা হতে পারে না। “নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে না পারলে এই আন্দোলন ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে,”—এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন রাশেদ।
তার এই বক্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ একে সাহসী সত্য ভাষণ হিসেবে দেখছেন, কেউবা মনে করছেন এটি একটি সময়োপযোগী আত্মসমালোচনা। তবে একবাক্যে বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তির প্রেক্ষিতে এমন প্রশ্নগুলো এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।