বিদ্যুৎ খাতে বৈদেশিক দায় মেটাতে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ১৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এর বড় একটি অংশ, প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, দেওয়া হয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেড (Adani Power Limited)–কে, যার কাছে পূর্বের বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। বর্তমান বকেয়া কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬৩.৫০ কোটি টাকায়।
অর্থনৈতিক চাপে থাকলেও, সরকারের এই উদ্যোগ বিদ্যুৎ খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ—যেমন, তরল জ্বালানির আমদানিতে সার্ভিস চার্জ হ্রাস, বৃহৎ শিপমেন্টের মাধ্যমে খরচ কমানো এবং ট্যারিফ কমিয়ে আনা। এসব মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকার সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নবায়নযোগ্য উৎসের দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। নতুন ঘোষিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০২৫’ অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় গ্রিডে ২০০০–৩০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য রুফটপ সোলার প্রকল্প এবং বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেও গতি আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি স্থিতিশীলতা, স্পিনিং রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং গ্রিডের আধুনিকীকরণের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে—গত বছরের ৪৭ হাজার কোটি টাকা থেকে এবছর তা কমিয়ে আনা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটিতে।
দেশজুড়ে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর সম্প্রসারণেও চলেছে কার্যক্রম। বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন উপকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই উদ্যোগে গতি এসেছে আরও বেশি।
বিদ্যুৎ খাতে এই ব্যয়, সাশ্রয় এবং কাঠামোগত সংস্কারের সমন্বয়ে সরকার যে ‘সংকটে স্থিতিশীলতা’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে—তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক কর্মপন্থায়।