জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্তমান ভূমিকাকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi)। জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীর এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিএনপি জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেবে কেন? আপনারা কারা?”
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজভী এ বক্তব্য দেন।
জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ক্ষোভ
রিজভী বলেন, “কে রাজনীতি করবে, না করবে এটা সরকারের বা আইনের ব্যাপার। বিএনপি কখনো কোনো উশৃঙ্খল জনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তবে আমাদের একটা বিশ্লেষণ আছে—গত ১৬ বছরে জাতীয় পার্টি কী করেছে?” তিনি অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র ফ্যাসিবাদকে রক্ষা করার কাজটি করেছে জাতীয় পার্টি। লাখ কোটি টাকা পাচার এবং স্বেচ্ছাচারিতার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তারাই।”
তিনি জাপা মহাসচিবের মন্তব্যকে আক্রমণ করে বলেন, “বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই, সুষ্ঠু নির্বাচনও হয়নি। তাহলে দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন কেন আসছে? যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা গুম হচ্ছিলেন, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল?”
ভারতকে নিয়েও প্রশ্ন
রিজভী বলেন, “জিএম কাদের সাহেব ভারত সফরে গিয়ে বলেছেন—ভারতের অনুমতি ছাড়া কথা বলবেন না। তাহলে জাতীয় পার্টি কি ভারতের রাজনৈতিক দল? নাকি বাংলাদেশের? এটাই আপনাদের মেরুদণ্ড, এটাই আপনাদের চরিত্র?”
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল ‘নির্বাচনবিহীন প্রহসন’। সেই ভোটে কেউ ছিল না, কেবল “কুকুর-বিড়াল-ছাগল” দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে। আর জাপা প্রথমে যেতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ হাসিনা বিএনপিকে নির্বাচনেই আসতে দেননি। আবার ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও জাতীয় পার্টির ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।”
শেখ হাসিনা ও এস আলমকে নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
রিজভীর অভিযোগ, “শেখ হাসিনার আমলে একটার পর একটা ব্যাংক এস আলমের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই এস আলম দিল্লিতে গিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দিয়েছেন শেখ হাসিনার হাতে, বাংলাদেশের ভেতরে কিছু ঘটানোর জন্য। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরও দুই হাজার কোটি দেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ এখন ভারতে রয়েছেন এবং বাংলাদেশে তার এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব?”
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার
তারেক রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “বলা হয়, তার মালয়েশিয়ায় অনেক কলকারখানা আছে। কিন্তু গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা একটা কারখানার নামও বলতে পারেননি।”
‘কুলিং টাইম’ নিয়ে খোঁচা
জাপার ‘কুলিং টাইম’-এর প্রস্তাবকে ব্যঙ্গ করে রিজভী বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় নেই, নির্বাচনও হয়নি, তাহলে কুলিং টাইম কিসের? শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন দুই বছর কুলিং টাইম দিয়ে পরে টর্চার শুরু করেছিলেন। বিএনপি কখনো নির্যাতনে বিশ্বাসী নয়।”
তিনি জানান, উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকে ৫০ থেকে ৫০০টি মামলার ভুক্তভোগী। “আমরাই যখন নিপীড়নের শিকার, তখন অন্য কারও ওপর আমরা নির্যাতন চাই না। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে—এটাই জনগণের চাওয়া,” বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের নিয়ে অভিযোগ
রিজভী দাবি করেন, “অনেকে সাংবাদিকতা ছেড়ে এক্টিভিজম করেছে। তারা চেতনার বয়ান তৈরি করেছে, অথচ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। সত্য বলা সাংবাদিকরা হত্যা বা কারাগারের শিকার হয়েছেন। যারা আওয়ামী লীগের দাসত্ব করেছে, তারাই এখন বড় বড় কথা বলছেন—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-কে অনেক সংবাদপত্রে ‘প্রয়াত জিয়াউর রহমান’ বলা হয়েছে। এই দুঃখ-এই বেদনা আমরা ভুলব না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজে’র কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল।