মব করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাসদর

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আগেও আমরা যেভাবে সশ্রদ্ধ সম্মান করেছি, আজও করি এবং ভবিষ্যতেও অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবো। কোনো ‘মব’ বা কোনো কিছু করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার কোনো সুযোগ নেই।’

সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক কর্নেল শফিকুল ইসলাম। 

সারাদেশে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরতে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার বাসায় মব সৃষ্টি করে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই উত্তর দেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে মব সৃষ্টি হয়েছিল। যখন সেনাবাহিনী এ খবর পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট উপস্থিত হয়ে মব নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে।
 
তিনি বলেন, মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। যেখানে যখন মব হয়েছে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কয়েকটি জায়গায় আমাদের যে বিলম্ব হয়েছে সেটা সোর্স থেকে তথ্য পেতে দেরি হওয়ার কারণে। কোনো ঘটনা ঘটার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়। তারপর সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়। এরমধ্যে কিন্তু কিছু কালক্ষেপণ হয়ে গেছে, তারপর আমাদের নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে যদি পেট্রোল পাঠায় তখনো কিছু সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটে যায় এটার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। এমন একটি উদাহরণ দেখানো যাবে না যে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু সেনাবাহিনী যায়নি বা সেনাবাহিনীর সামনে মব হয়েছে।
 
যারা মব সৃষ্টি করে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সেনাবাহিনীর একমাত্র কাজ নয়। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার/আটক এবং হস্তান্তর করতে পারে। কোনো জুডিসিয়ারি বা আইনি প্রক্রিয়ায় কাউকে সাজা দিতে পারে না। সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এরইমধ্যে সবাই একত্রে কাজ শুরু করেছে।
 
রাজবাড়ীতে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া ও দরবারে হামলা–ভাঙচুর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনা অনেক পরে সেনাবাহিনী জানতে পারে। যখনই জানতে পেরেছে, সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাত ১১টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তৎপর।
 
সম্প্রতি কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ–অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভূমিকাও তুলে ধরেন তিনি।
  
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পাইনি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সে অনুযায়ী পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত এক মাসে সেনাবাহিনী ৬৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ২৯৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। আর খোয়া যাওয়া ১২ হাজার ১১৯টি অস্ত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৭৯৪টি এবং হারানো ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫৯ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৯২৬ জন এবং গত এক মাসে ১ হাজার ২৯৪ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *