২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন (DUCSU Election) ঘিরে অনলাইনে যে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তার বড় একটি অংশই ছিল কৃত্রিম—একটি সাজানো ‘ডিজিটাল মরীচিকা’। সম্প্রতি প্রকাশিত SharedToday–এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে “অটো-টার্ফিং” নামের এক সংগঠিত ডিজিটাল প্রচারণা কৌশলের বিষয়টি, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার একই ধরনের পোস্ট করে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তার মিথ্যা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়।
প্রতারণার চিহ্ন স্পষ্ট
“অটো-টার্ফিং” চিহ্নিত করা যায় কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখে, যেমন:
- একই বা প্রায় একই ধরনের পোস্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে অল্প সময়ে শেয়ার হওয়া।
- পূর্বনির্ধারিত স্লোগান ও হ্যাশট্যাগের অতিরিক্ত ব্যবহার।
- কনটেন্টে বৈচিত্র্য না থাকলেও হঠাৎ করে বিশাল সংখ্যক লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের বিস্ফোরণ।
এতে করে বাস্তব জনপ্রিয়তা এবং ডিজিটালি তৈরি করা জনমতের পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়ে পড়ে অত্যন্ত কঠিন।
প্রভাবিত প্রতিযোগিতা: শেষ ২৪ ঘণ্টার নাটক
নির্বাচনের আগের ২৪ ঘণ্টার অনলাইন ইনগেজমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, Left Alliance-এর প্রার্থী মেঘমল্লার আচমকাই এগিয়ে যান, যেখানে তার ইনগেজমেন্ট দাঁড়ায় ৬৩.৬ শতাংশে। অন্যদিকে শিবির (Shibir)-এর ফারহাদ পান ৩৩.৩ শতাংশ, এবং এক সময়ের শীর্ষে থাকা অধিকার (Odhikar)-এর সাবিনা পড়ে যান মাত্র ২.১ শতাংশে।
তবে এই উত্থান ছিল মূলত কৃত্রিম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টার মেঘমল্লারের ইনগেজমেন্টের ৭০ শতাংশই এসেছে সংগঠিত টার্ফিং প্রচারণা থেকে। একইভাবে ফারহাদের ক্ষেত্রেও ৬০–৬৫ শতাংশ ইনগেজমেন্ট টার্ফিং-নির্ভর ছিল।
আসল চিত্র: অরগানিক ইনগেজমেন্টে প্রকৃত প্রতিযোগিতা
যখন এই কৃত্রিম প্রচারণা সরিয়ে শুধুমাত্র ‘অরগানিক’ বা স্বাভাবিক ইনগেজমেন্ট বিশ্লেষণ করা হয়, তখনই প্রকৃত প্রতিযোগিতার চেহারা স্পষ্ট হয়। দুই সপ্তাহের ট্রেন্ড অনুযায়ী উপ-সভাপতি (VP) পদের লড়াইয়ে প্রকৃত চিত্র এমন:
- উমামা (স্বতন্ত্র): প্রায় ৪০%
- আবিদুল (জিএসডি): প্রায় ৩৬%
- সাদিক (শিবির): প্রায় ২২%
- অন্যান্য: ৩ শতাংশের নিচে
এই পরিসংখ্যান বলছে, টার্ফিং অপসারণের পর দেখা যাচ্ছে যে VP পদের লড়াইটি প্রকৃতপক্ষে উমামা এবং আবিদুলের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, যেখানে সাদিক কিছুটা পিছিয়ে।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে এমন ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ শুধু নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি, বরং ভবিষ্যতে ডিজিটাল রাজনৈতিক প্রচারের নৈতিকতা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করেছে।