ভোলার চরফ্যাশনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি (Rasna Sharmin Mithi)-র বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। যোগদানের পর থেকেই তিনি সমালোচিত হয়ে আসছেন একনায়কতান্ত্রিক আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। বর্তমানে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও পৌর প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করছেন। এই অতিরিক্ত ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে পৌরসভার মার্কেট ও রাস্তা সংস্কারের নামে নতুন টেন্ডার আহ্বান করে জেলা পরিষদ থেকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে কারণ স্থানীয়রা বলছেন, যেসব প্রকল্পে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, তার অনেকগুলো আগেই নির্মিত। উদাহরণ হিসেবে, চরফ্যাশন পূর্ববাজার সোনালী পুকুরপাড় মার্কেট। এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগেই যৌথভাবে নির্মিত হয়েছিল পৌরসভা ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে। অথচ বর্তমান প্রশাসক মিথি আবারও ওই স্থানে কিচেন মার্কেট তৈরির নামে ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার প্রকল্প নেন। টেন্ডার প্রকাশ হয় ১৮ মে, খোলা হয় ২ জুন, এবং ঠিকাদারও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন—যেখানে মার্কেট আগেই নির্মিত এবং সেখানে ভাড়াটে ব্যবসায়ী পর্যন্ত বসে আছেন, সেখানে নতুন প্রকল্পের প্রয়োজন কী?
ওই মার্কেটের ভাড়াটে ব্যবসায়ী মো. নুর নবী বলেন, তিনি ছয় মাস ধরে দুটি ঘর ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। তার আগে ওই ঘরে অন্য ভাড়াটেও ছিলেন। একইভাবে ব্যবসায়ী ইউনুস মোল্লা ও খোরশেদ আলম মাস্টারও জানিয়েছেন, মার্কেট নতুন করে নির্মিত হয়নি; জায়গাও নেই নতুন প্রকল্পের জন্য।
একই অভিযোগ উঠেছে পেশকার বাড়ি জামে মসজিদের সড়ক নিয়েও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ সড়কটিও আগেই নির্মিত, অথচ চলতি বছরের ১৮ মে আবার টেন্ডার প্রকাশ করা হয় প্রায় তিন লাখ টাকার বরাদ্দে। মসজিদের এক মুসল্লি প্রশ্ন তুলেছেন—“এক বছর না যেতেই কেন আবার টেন্ডার?”
জেলা পরিষদ থেকে কাগজে-কলমে আরো কিছু প্রকল্পে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্বই নেই। উদাহরণস্বরূপ, চরফ্যাশন শিল্পকলা একাডেমির জন্য বাদ্যযন্ত্র ক্রয়ে তিন লাখ টাকা, সাউন্ড সিস্টেমে তিন লাখ টাকা এবং চরফ্যাশন মডেল মসজিদের মাদুর ক্রয়ের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ। কিন্তু মসজিদের খতিব মাওলানা মো. সালেহ উদ্দিন জানান, তারা কোনো অর্থ কিংবা মাদুর পাননি।
এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া (Motahar Hossain Alamgir Maltia) অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও মিথি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং তাদের সহযোগিতায় নানা অনিয়মে জড়িত। পূর্বে হাটবাজার ইজারা, কাবিখা, কাবিটা ও টিআর প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তার দাবি, জেলা পরিষদ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা অস্তিত্বহীন প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে, যেগুলোর নাম স্থানীয়রাও শোনেননি।
বিএনপির অপর নেতা কাজী মনজুর হোসেন বলেন, “এত দৃশ্যমান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা হতাশাজনক।” জামায়াত নেতা কাজী মাওলানা হারুন অর রশিদও ইউএনও মিথিকে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বলে উল্লেখ করে বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তুলেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হরিলুট ও হাটবাজার ইজারার নামে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলেও দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মিথি দাবি করেন, জেলা পরিষদের বরাদ্দ সম্পর্কে তিনি জানেন না। তার বক্তব্য অনুযায়ী, পৌর মার্কেট ও রাস্তা নতুনভাবে নির্মিত হবে। যেখানে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে জায়গা না থাকলে, পৌরসভার অন্য জায়গায় তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে জানা গেছে, ইউএনও মিথির স্বামী সিনিয়র সহকারী জজ রেজাউল করিম বাধন বর্তমানে একই উপজেলায় কর্মরত এবং এর আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দম্পতির ক্যারিয়ারে গোপালগঞ্জ ও যশোরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ইতিহাস রয়েছে।