চট্টগ্রাম নগরীতে ঝটিকা মিছিলের হোতা নওফেল ও নাছির

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গসংগঠন ঝটিকা মিছিল করছে। সিটি সার্ভিসের হিউম্যান হলারে করে ১৫-২০ জন করে লোকজন এসে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় নেমে হঠাৎ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মিছিল করে, তারপরই পথচারীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মিছিলের ভিডিও ধারণ করে পাঠানো হচ্ছে পলাতক নেতাদের কাছে, যেখান থেকে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

পুলিশ জানিয়েছে, এসব মিছিলে জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কিছু যানবাহন নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মূলত পাঁচটি গ্রুপ শহরজুড়ে সক্রিয়। এর মধ্যে তিনটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন পলাতক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (Mohibul Hasan Chowdhury Nowfel), আরেকটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন (A J M Nasir Uddin)। নাছির সরাসরি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও তার ঘনিষ্ঠ সাবেক দুই কাউন্সিলর মাঠে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে নওফেল ভার্চুয়ালি তার গ্রুপগুলো পরিচালনা করছেন এবং তাদের মিছিলের ভিডিও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও আপলোড হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, এসব মিছিলে শুধু দলীয় কর্মীই নয়, বরং ভাড়া করা দিনমজুরও রয়েছে। আনোয়ারা, কর্ণফুলী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া ও চন্দনাইশ থেকে শ্রমিকদের শহরে এনে দিনে এক-দুইটি মিছিলে নামানো হয়। জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, আসা-যাওয়ার খরচ ও দুবেলা খাবার দেওয়া হয়।

আগ্রাবাদের মুদি দোকানি জসিম উদ্দিন জানান, হঠাৎ দেখেন ট্রাক থেকে লোকজন নেমে মাস্ক পরে ব্যানার হাতে নিয়ে মিছিল শুরু করেছে। ১০০-১৫০ গজ দৌড়ে মিছিল করে তারা। মোটরসাইকেলে থাকা এক ব্যক্তি পুরো ভিডিও করে। তিন মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনা শেষ হয়ে যায়।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শীর্ষ নেতারা পালিয়ে যান। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের এস আলমের সঙ্গে তার বৈঠকের খবর প্রকাশিত হয় এবং দাবি ওঠে দেশে মিছিলের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ভাড়ায় লোক এনে চট্টগ্রাম শহরে মিছিল করানো হচ্ছে।

গত শুক্রবার আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে হওয়া মিছিলে ব্যানারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির ছবি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার তানিমকে হাজির করার সময়ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হয়। তানিম বর্তমানে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি।

চট্টগ্রাম আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের আইনজীবীরাই স্লোগান দিয়েছে, পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, গ্রাম থেকে আনা লোকজনকেই এসব মিছিলে ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের অংশগ্রহণকারীরাও স্থানীয় নয়। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *