জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক সুপারিশ ও সরকারের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed), বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, “এভাবে রেফারিকে কখনো গোল দিতে দেখিনি।” মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বক্তব্যে সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) তাদের সাম্প্রতিক সুপারিশে বিভক্তি ও অনৈক্যের বীজ বপন করছে। তিনি বলেন, “কমিশনের সুপারিশে জাতি বিভক্ত হবে, ঐকমত্য নয়। এর মাধ্যমে তারা কী অর্জন করতে চায়, আমরা বুঝতে পারছি না।”
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সম্প্রতি তাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে একটি সরকারি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, পরবর্তী জাতীয় সংসদ একই সাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে কমিশনের সুপারিশগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে।
এই প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশনের এই সুপারিশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নিজে স্বাক্ষর করেছেন, ফলে এটি কেবল কমিশনের নয়, সরকারেরও অবস্থান। তার ভাষায়, “কমিশন রেফারির ভূমিকা পালনের কথা বললেও, এখন দেখি রেফারি নিজেই গোল দিচ্ছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, কমিশনের সুপারিশে যেসব দফা গণভোটে তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে আগেই আলোচনা হয়নি। ৪৮টি দফা খসড়া আদেশে তফসিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের কথা বলা হয়েছে, অথচ “যার ওপর গণভোট হবে, সেই জুলাই জাতীয় সনদ সুপারিশেই নেই।”
তিনি আরও বলেন, কমিশনে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও, দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত সুপারিশে স্থান পায়নি। “তাহলে ১১ মাস ধরে এই কসরতের অর্থ কী?” প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা।
এছাড়া তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (RPO) অন্তর্ভুক্ত একটি ধারারও সমালোচনা করেন, যেখানে বলা হয়েছে, জোটবদ্ধ হলেও প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। তার ভাষায়, “আরপিওতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি অনালোচিত প্রভিশন রাখা হয়েছে, যা উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়ে এখন অর্ডিন্যান্স হওয়ার অপেক্ষায়।”
সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় দেখতে চেয়েছি। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের কর্মকাণ্ড আমাদের হতাশ করেছে।”


