১১ ও ১৩ নভেম্বর ঘিরে রাজধানীতে টান টান উত্তেজনা, পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি

আসন্ন ১১ ও ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। একদিকে জুলাই অভ্যুথানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও আরও দুই আসামির বিরুদ্ধে রায়ের সম্ভাব্য দিন ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করেছে আদালত, অন্যদিকে ১১ নভেম্বর ‘গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে’ দাবিতে জামায়াতসহ আট দল কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) (Dhaka Metropolitan Police)।

শনিবার (৮ নভেম্বর) ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক বৈঠকে ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়—যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করতে হবে। এরপর থেকেই সাত হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিয়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে ধানমন্ডি, গেন্ডারিয়া, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়।

শনিবার বিকেলে ধানমন্ডি-২৭ থেকে শুরু করে শংকর সাত মসজিদ সড়ক এবং ধানমন্ডি পনের নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে টহল ও অবস্থানে দেখা যায়। একই চিত্র রাজধানীর আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লক্ষ্য করা গেছে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ (Awami League) ঘোষণা দিয়েছে, ১৩ নভেম্বর রায়কে সামনে রেখে দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “১৩ নভেম্বর আমরা ঢাকাকে লকডাউন করে দেবো।” এই ঘোষণার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি এক বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ‘ফ্যাস্টিসের দোসররা’ যে কোনো সময় দেশে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালাতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম বার্তা দিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও সরাসরি নির্দেশ এসেছে—বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে ‘শক্ত অবস্থান’ নিতে হবে।

অন্যদিকে, আট দল ১১ নভেম্বর ঢাকায় জনসভা আয়োজনের মাধ্যমে ‘গণভোট আগে চাই, নিম্নকক্ষে পিআর চাই’ দাবিতে পাঁচ দফা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি চূড়ান্ত আহ্বান জানাবে। তারা বলেছে, সরকার যদি কালক্ষেপণ করে, তাহলে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের দিনে পরিণত করার চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। সমাবেশ থেকেই তারা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।

আট দলের লিয়াজোঁ কমিটি জানিয়েছে, ১১ নভেম্বরের সমাবেশে তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ এবং জাতীয় নির্বাচনপূর্ব গণভোট বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবি পুনরায় উত্থাপন করবে।

সবমিলিয়ে রাজধানীজুড়ে এখন টান টান উত্তেজনা। ১১ ও ১৩ নভেম্বর ঘিরে দুই রাজনৈতিক শক্তির হুঁশিয়ারি ও পুলিশের কড়া প্রস্তুতি রাজধানীজুড়ে এক অস্থিরতার পূর্বাভাস দিচ্ছে। দুই গোষ্ঠীর একই সময়ে একই সুরে হুমকি—এটা নিছক কাকতলীয় নাকি এর পিছনে রয়েছে নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে নানা গুঞ্জন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *