অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) বর্তমানে এক অনিশ্চিত ও চাপাপড়া রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, জুলাই সনদ (July Accord) বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতপার্থক্যের কারণে। নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে এখন সরকার দ্বিধায় পড়েছে, কারণ রাজনৈতিক ঐকমত্য এখনও অধরা।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই যদি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে সরকার নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত জানাবে—এমন ঘোষণা আগেই দেয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও এখনও সরকারের অবস্থান পরিষ্কার নয়, ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে: সিদ্ধান্ত কি একতরফা হবে? দলগুলো তা মানবে তো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের কারণে সরকার বিকল্প প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। আইন মন্ত্রণালয়কে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আইনগত কাঠামো ও প্রশাসনিক স্তরে তার প্রস্তুতিও এগিয়ে চলেছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে আবারও দলগুলোর সঙ্গে একটি সমন্বয় বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা। কারণ, সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর সে লক্ষ্যে অচিরেই কার্যকর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭শে অক্টোবর, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে দুটি প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাব ঘিরেই রাজনৈতিক সমীকরণে শুরু হয় মতবিরোধ। বিশেষ করে, গণভোট এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বিষয়ক অংশে বিএনপি (BNP) ও জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) বিপরীত অবস্থান নেয়। এই অবস্থার মধ্যেই গত ৩রা নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে সরকার দলগুলোকে সাতদিনের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানায়। কিন্তু ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও দলগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, একদিকে দলগুলোর মতামতের অপেক্ষা চললেও, অন্যদিকে আদেশ জারির প্রস্তুতি সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছে। উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয় এবং আইন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়।
কমিশনের দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুসারে, সরকার সরাসরি একটি আদেশ জারি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে পূর্বনির্ধারিত ২৭০ দিনের সময়সীমার পরিবর্তে যতদিন লাগে ততদিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করার বিধান রাখা হতে পারে। পাশাপাশি, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বাইরে বাকি সব বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটেই বিল পাস করতে পারবে।
বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার জট খুলবে কি না, বা সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে কিনা, তা নির্ভর করছে চলতি সপ্তাহের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ওপর। প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোর ঐক্যমতের জন্য অপেক্ষা করছেন, কিন্তু সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে।


