‘ঢাকা লকডাউন’ কার্যক্রমে নাশকতার পেছনে অর্থ দিয়েছিলেন নিক্সন চৌধুরী

নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কথিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে নাশকতার পরিকল্পনায় অর্থ জোগানোর অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন চৌধুরী (Mujibur Rahman Nixon Chowdhury)-এর বিরুদ্ধে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন গ্রেফতার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক হোসেন ওরফে ‘বোম ফারুক’। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল (Abdul Jalil) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ জানায়, আগামী ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ফারুক হোসেনকে আদালতে পাঠায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তার আগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকার নুরজাহান টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময় যুব মহিলা লীগের সদস্য নাসরিন আক্তারকেও আটক করা হয়। পুলিশের তথ্যমতে, ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছয়টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, সারা দেশব্যাপী অচলাবস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা রোববার ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন। ওই মিছিলটি ফারুক হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছিল। সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়। ঘটনার পর পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে ফারুক ও নাসরিনকে গ্রেফতার করে।

জেলা পুলিশ সুপার জানান, নিষিদ্ধ ওই কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে নিক্সন চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠ ফারুক হোসেনকে পাঁচ লাখ টাকা দেন। এর মধ্যে চার লাখ টাকা ফারুক আরেক ব্যক্তিকে প্রদান করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সেই ব্যক্তিকে আটক করার চেষ্টা চলছে, যদিও তার নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া ফারুক বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে দলীয় কর্মীদের কাছে অর্থ পাঠিয়েছেন বলে তদন্তে জানা যায়।

ফারুক হোসেনের মোবাইল ফোন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ‘ঢাকা লকডাউন’ সফল করতে তিনি বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।

‘বোম ফারুক’ নামে পরিচিত হওয়ার ইতিহাসও তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে ফরিদপুরের টেপাখোলা এলাকার ইয়াসিন কলেজের ভিপি থাকাকালে ছাত্রদলের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপের সময় বোমাটি তার হাতে বিস্ফোরিত হয়, এতে বাম হাতের একটি আঙুল হারান ফারুক। সেই থেকে তার নামের সঙ্গে ‘বোম’ শব্দটি যুক্ত হয়। বর্তমানে ফারুকের নামে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় চারটি এবং ঢাকার সূত্রাপুর থানায় দুটি মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হবে। পাশাপাশি ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে গত তিন দিনে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন থানায় অভিযান চালিয়ে ৬০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক যুবলীগ নেতা রয়েছেন। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *