“চক্র ভাঙতে হলে প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার দরকার”—মির্জা ফখরুলের মন্তব্যকে স্বাগত

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)-এর সাম্প্রতিক মন্তব্য—যেখানে তিনি বলেছেন যে ভিত্তিহীন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে—তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। যদিও তার দেওয়া সকালের বক্তব্য রাতে এসে কিছুটা ‘পরিবর্তন’ করা হয়েছে তবুও বলতে দ্বিধা নেই, তার এই বক্তব্য একটি “বুদ্ধিমান পদক্ষেপ” এবং বাংলাদেশে বছরের পর বছরে ধরে চলতে থাকা প্রতিশোধপরায়ণতার রাজনৈতিক চক্রের অবসান ঘটানোর এক ইঙ্গিত।

জনাব ফখরুল এমন একটি সময়ে এমন বক্তব্য সামনে এনেছেন যখন কেবল মাত্র অতীতে আওয়ামী লীগের কিছু মূল্যবোধের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখার দায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যাপক প্রতিশোধমূলক আচরণ শুধু প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিকেই নয়, আমাদের ইতোমধ্যেই ভঙ্গুর গণতন্ত্রকেও মারাত্মকভাবে দুর্বল করে। যারা মানবতাবিরোধী যেকোনো রকমের অপরাধের সাথে যুক্ত তাদের ব্যাপারে কোনো আপস না করেও বহু ধারায় বিভক্ত এক সমাজ ব্যবস্থাকে এক সুতায় গাথার একটি সূচনা হতে পারে তার এই বক্তব্য – তার এই মনোভাব।

আমাদেরকে বুঝতে হবে, আইনের শাসন আর জঙ্গল আইন একসাথে চলতে পারে না, যে সময় বাংলাদেশে মবের রাজত্ব কায়েম হয় সেই সময়েই অনেকেই বলেছিলেন, আপনি হয় আইনের শাসনের অধীনে থাকবেন, নয়তো জঙ্গলের নিয়মে চলবেন। এর মাঝামাঝি কোনো পন্থা নেই , থাকতে পারে না। যদি আমরা সত্যিই মনে করি আমরা একটি সভ্য জাতি হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাকি , তবে আমাদেরকে অবশ্যি আইনের অধীনই চলতে হবে, শুধুমাত্র কারো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য তাকে জেলে পাঠানো যায় না, তাকে মবের মুখোমুখি করা যায়না।

এই কথা আগেই বহুবার বলা হয়েছে , আবারও বলছি, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হয়, তাহলে তা আইনের মাধ্যমেই করা হোক। আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, কোন কর্মকাণ্ড বা বক্তব্য অপরাধ। আর কোনো কোন অপরাধের জন্য তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হলো। তাতে এই দলের সমর্থক গোষ্ঠী (তা যতটুকুই অবশিষ্ট থাকুক) – তারাও জানতে পারবে ঠিক কি কারনে তাদের আর এই দলের সমর্থন করা উচিত হবে না। আবার বিশ্ব দরবারেও সরকার মাথা উঁচু করে জানাতে পারবে কেন এই দল বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। অতীতে তাদের কোনো এক সময় সমর্থন করেছিলেন বলে কাউকে আটকে রাখতে পারেন না- এই সত্যতা অনুধাবন করতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বিশ্বের যেকোনো সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় “গণগ্রেপ্তার এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রতি অবমাননার শামিল।”

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য অনেকের খারাপ লাগতে পারে, তবে একটি সভ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশেষ করে দলটির এক সময়ের সমর্থক গোষ্ঠীর সাথে বিএনপির আচরণ হওয়া উচিত উদার এবং ন্যায়নিষ্ঠ। আওয়ামী লীগ যেভাবে বিরোধীদের দমন করেছিল, বিএনপি যদি সেই পথ অনুসরণ না করে, তবেই চক্রটি ভাঙা সম্ভব হবে।

প্রকৃত সহিংসতা, দুর্নীতি বা অপরাধে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। কিন্তু যারা কেবল একটি মতবাদ বা রাজনৈতিক মূল্যবোধ ভাগ করে নিয়েছে, তাদের অপরাধী হিসেবে দেখা চলবে না। এখানে একটি স্পষ্ট পার্থক্য টানতে হবে—মানুষ কী করেছে এবং তারা কী বলেছে, তার মধ্যে।

আমাদের মনে রাখতে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদেরকে হতে হবে অনেক বেশি সহনশীল, সহমর্মী এবং প্রমোট সহিষ্ণু। বিভেদ ভুলে গড়ে তুলতে হবে এক ন্যায়ের সমাজ ব্যবস্থা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *