দুই ডজন আসনে দানা বাঁধছে দ্বন্দ্ব, বিকল্প চিন্তায় বিএনপি’র নীতিনির্ধারকরা

একক প্রার্থী নির্ধারণের পর মাঠপর্যায়ে বেশ কিছু আসনে প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে বিএনপি (BNP)। দেশের অন্তত ২৩টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ইতোমধ্যেই নড়ে চড়ে বসেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা । অনেকে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের প্রলোভনেও পড়ছেন বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় বেশ কিছু আসনে দলে বিভাজন দেখা দিচ্ছে—যা প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিএনপিকে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, মনোনীত প্রার্থীরা যদি নিজ নিজ এলাকায় ঐক্য গঠনে ব্যর্থ হন, তবে তাদের স্থলাভিষিক্ত করার বিষয়েও বিবেচনা করা হবে। আবার কারো বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে দলীয় ঐক্য ভাঙার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তার বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, কয়েকটি আসনে সংঘাত ও বিরোধ আরও প্রকাশ্য হয়েছে। অনেক প্রার্থী পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হলেও অন্তত ২৩টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দল নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা যাচাই করছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে—ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “কয়েকটি আসনে ক্ষোভ হতেই পারে। আমরা এগুলো হ্যান্ডেল করছি এবং পর্যবেক্ষণে রাখছি। সব আসন মিত্রদের জন্য রাখা হবে না—দলীয় প্রার্থীতাও নিশ্চিত করা হবে।”

অঞ্চলভিত্তিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ

সাতক্ষীরা-২ আসনে ১২টি ইউনিয়নের ৩৩ জন নেতা মনোনীত প্রার্থী আবদুর রউফের পরিবর্তে আব্দুল আলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছেন। সাতক্ষীরা-৩ আসনে ‘গরিবের বন্ধু’ খ্যাত ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়ায় কালীগঞ্জে বিক্ষোভ হয়েছে।

ময়মনসিংহ-৩ আসনে প্রার্থী এম ইকবাল হোসেইন ও মনোনয়নবঞ্চিত আহম্মেদ তায়েবুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, সিলেট-৪, ময়মনসিংহ-৬, হবিগঞ্জ-৪, রংপুর-৩, কক্সবাজার-৪, নাটোর-১, নারায়ণগঞ্জ-২, মেহেরপুর-২, চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-২, নরসিংদী-৪, মুন্সীগঞ্জ-২—এইসব আসনেও মনোনয়ন নিয়ে চলছে চরম অসন্তোষ ও বিক্ষোভ।

বিশেষ করে নাটোর-১ আসনে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের কন্যা ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দেওয়ায় চাপে পড়েছে দল। একইভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ইয়াছির আরশাদ রাজন এবং ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তাইফুল ইসলাম টিপুর অনুসারীরা মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করছে।

বিকল্প পরিকল্পনা ও শিগগিরই প্রার্থী ঘোষণা

২৩ আসনের এই সংকটের পাশাপাশি ফাঁকা থাকা ৬৩টি আসনের মধ্যে অন্তত ১১টিতে শিগগিরই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা-৯, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, মাদারীপুর-২, গাজীপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, ঝিনাইদহ-৪ ও সিরাজগঞ্জ-১ উল্লেখযোগ্য।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা, ত্যাগ ও সংগঠনের প্রতি আনুগত্য বিবেচনায় নিয়ে এই আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। কোনো এলাকায় মনোনীত প্রার্থীরা যদি ঐক্য তৈরি করতে ব্যর্থ হন, তবে বিজয়ের স্বার্থে তাদের পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।

তবে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ঐক্য অটুট রাখতে এ মুহূর্তে বিএনপি মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় নেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *