বিএনপির ছেড়ে দেওয়া দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন দুই ছাত্র উপদেষ্টা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন উপদেষ্টা পরিষদের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য—আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) এবং মো. মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। তারা দুজনই সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।

তাদের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীরা জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগেই তারা পদত্যাগ করবেন এবং মাঠে নামবেন। পদত্যাগের বিষয়টি তারা মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব। নীতিগতভাবে উপদেষ্টা পদে থেকেই নির্বাচন করা ঠিক হবে না।” তিনি জানান, কোথা থেকে নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে জানা গেছে, তিনি পূর্বে কুমিল্লার ভোটার ছিলেন, বর্তমানে ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপির অনঘোষিত ফাঁকা আসন ঢাকা-১০ থেকেই তিনি নির্বাচন করতে পারেন।

একইভাবে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও দীর্ঘদিন ধরে পদত্যাগের আভাস দিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার দেওয়া মন্তব্য এবং রাজনৈতিক সমালোচনায় সরকারের উচ্চমহলে অসন্তোষ তৈরি হয়। একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি উপদেষ্টা পদ থেকে বিদায়ের ইঙ্গিত দেন।

সূত্র বলছে, এই দুই উপদেষ্টা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ধারা চালু করতে চাইছেন—প্রতিষ্ঠানিক রাজনীতির বাইরের প্রার্থীদের জন্য একটি বিকল্প পথ। তবে ঠিক কোন ব্যানারে তারা মাঠে নামবেন, এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় রয়েছে যে, তারা হয়তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং ঐ ফাঁকা আসনগুলো থেকে জয়লাভের চেষ্টা করবেন।

এদিকে নির্বাচনী মাঠে এমন নতুন চিত্র সামনে আসায় আগ্রহ তৈরি হয়েছে—কোন আসনগুলো বিএনপি ছেড়ে দিচ্ছে এবং সেখানে কে বা কারা নতুন মুখ হিসেবে হাজির হচ্ছেন। বিশেষ করে, আসিফ মাহমুদের ঢাকা-১০ কেন্দ্রীক তৎপরতা ও মাহফুজ আলমের নানামুখী মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

অন্যদিকে নির্বাচনি পরিবেশ ঘিরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party – NCP)-তেও চলছে বিভাজনের আশঙ্কা। সম্প্রতি জোট গঠনের বৈঠকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (United Peoples Bangladesh – UPB)–কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে তীব্র বিরোধিতা ওঠে। বৈঠকে ৪০ নেতার মধ্যে মাত্র তিনজন এতে সম্মতি দেন, বাকিরা বিএনপির সঙ্গে বা এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন।

এই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপির সরিয়ে নেওয়া আসনগুলোতে নতুন প্রার্থীদের আগমন রাজনীতিতে ভিন্নধারার বার্তা দিতে পারে। বিশেষ করে যদি তারা রাজনৈতিক দল ছাড়াই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

আবার অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে দুই উপদেষ্টা নূরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) থেকেও নির্বাচন করতে পারেন। সেক্ষত্রে বিএনপি’র কাছে গণঅধিকার পরিষদের চাওয়া চার আসনই চার দেওয়া হবে। বাকি দুটি আসনে থাকবেন নূর আর দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। সেক্ষত্রে এনসিপির একটি অংশ তাদের সাথে এসে যুক্ত হতে পারে। বিশেষ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কিছু পরিচিত মুখকেও সেখানে দেখা যেতে পারে।

নির্বাচনের তফসিল ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে এবং ভোট হতে পারে ৮ ফেব্রুয়ারি—এমনটাই জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো। সেই হিসেবেই পদত্যাগ ও প্রার্থীতা ঘোষণা নিয়ে সময় হিসেব কষছেন উপদেষ্টা পরিষদের এসব সদস্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *