খুলনা-১ আসনে জামায়াতের হিন্দু প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী এখন টক অব দ্যা খুলনা পলিটিক্স। কৃষ্ণ নন্দীর প্রার্থিতায় জামায়াতের জন্য ব্যুমেরং হতে পারে। পাশাপাশি খুলনা ৫ আসনে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরোয়ারের পাল্লা ভারীতে কৃষ্ণ নন্দী হয়েছে বলির পাঠা এমন মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। গত ২ দিন ধরে জামায়াতের হিন্দুপ্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার সাথে মদ্যপান অবস্থায় ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে ওঠে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল। তবে জামায়াতের হাইকমান্ড তাদের পলিসিতে আশাবাদী। আর নন্দী বলছেন এসব বানোয়াটি ছবি।
খুলনা ৫ আসনের জামাতের প্রার্থী হচ্ছে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার। স্থানীয় বিএনপির সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই আসনের বিজয়ের লক্ষ্যে কুটকৌশল হিসেবে এই আসনের চুকনগরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীকে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা খুলনা ১ আসনের প্রার্থী করা হয়েছে। যাতে ডুমুরিয়ার হিন্দু ভোটাররা জামাতকে সহজে বিশ্বাস ও আস্থা করে করে মিয়া গোলাম পরোয়ারকে ভোট দিবে। কিন্তু সাধারণ অরাজনৈতিক মুসলমান ভোটাররা বিষয়টিকে বাঁকা চোখেই দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে জামায়ত যেখানে মুসলিম আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেখানে এই নোংরা খেলা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। খুলনা ১ আসনে জামায়েতর প্রার্থী হিসেবে ইতোপূর্বে মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু প্রার্থী বদল করায় খোদ জামায়াতের সাধারণ সমর্থকরা ব্যাপক অসন্তষ্ট। মাঠ পর্যায়ে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
অপরদিকে, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পেজে কৃষ্ণ নন্দীর কিছু ছবি প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়। স্থানীয় জামায়ত কর্মীদের অভিযোগ বানোয়াট ছবি ছড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মজা নিচ্ছে। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতের আসল মুনাফিকি চরিত্র ফুটে উঠছে। বটিয়াঘাটা খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতীতে বিশ^াসী। জামায়াত ইসলাম নেতৃবৃন্দ খুলনা-৫ আসনকে টার্গেট করে খুলনা-১ আসনে যে মুনাফিকি খেলায় মেতে উঠেছে তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই। ভোটের ব্যালটেই তার প্রমান হবে।
এদিকে কৃষ্ণ নন্দী বলেছেন, আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ছাড়া ছবিটি তৈরী করা। আমি এর নিন্দা জানাই। মদ্যপানের বদঅভ্যাস আমার কখনোই ছিল না। ভারতের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার কখনো বৈঠক হয়নি।”
এই বক্তব্যের রেশ ধরে বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাইনি”। নন্দী বাবুর বক্তব্যের অবস্থা এমনই। জামায়াতের অর্ধেক ভোটররাও নন্দী বাবুর সাথে আর নেই। সময় সেটা জবাব দিবে। জামায়াত ইসলামের বটিয়াঘাটা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, বানোয়াট ছবি দিয়ে জামায়াতের ভাবমুর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।
গত ৫ ডিসেম্বর জুলকারনাইন তার ফেসবুক পেজে কৃষ্ণ নন্দীর তিনটি ছবি প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা আইবির এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করছেন। অবশ্য ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ছবির মেটাডেটা পাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ ছবির সত্যতা তিনি নিশ্চিত করেননি। কিন্তু তার পোস্টের পর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ের দোকানে, অফিস- আদালতে সেলুনে কিম্বা আলাপচারিতায় সবজায়গায় ছবিটি নিয়ে ব্যাপক ঝড় উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, “ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়ার চুকনগরে। তাঁর বাবা-দাদার জন্মও সেখানে। লেখাপড়া করেছেন চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৩ সালে জামায়াতের মিয়া গোলাম পাওয়ারের হাত ধরেই দলটিতে যোগ দেন তিনি। গত বছর তাকে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি করা হয়। গত ৩১ অক্টোবর জামায়াতের হিন্দু সমাবেশে তার নেতৃত্ব বিপুল জমায়েত হয়েছিল। এরপরই তাকে প্রার্থী করার গুঞ্জন ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে তিনি বটিয়াঘাটা উপজেলায় প্রচারণা শুরু করেন। গতকালও তিনি বটিয়াঘাটায় প্রচারণা এবং জামায়াত কার্যালয়ে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সূত্রটি আরো জানায়, বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে কৃষ্ণ নন্দী তার আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের সাথে ওঠা বসা করতেন। এক মঞ্চে তাকে বহুবার বিশেষ ঘনিষ্ঠতায় দেখা গেছে। সে ছবিও সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।


