দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ১৮ দলীয় একটি নতুন জোট—‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’। এই জোটের নেতৃত্বে আছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (ABM Ruhul Amin Hawlader), আর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকছেন জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (Anwar Hossain Manju)।
রবিবার ঢাকার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। জোটের মূল লক্ষ্য—আগামী নির্বাচনকে বৈষম্যহীন, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ঘোষণাপত্রে সাতটি দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, আগামী দুই মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারে রূপান্তর করার আহ্বান।
এই সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব পূজা ঝা, ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর টিম ডাকেট, মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি কামরুল হাসান খান এবং ব্রুনাই মিশনের প্রধান রোজাইমি আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতা মানে শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। তিনি বলেন, “বাকস্বাধীনতা নেই বলবো না, কিন্তু সামান্য ব্যতিক্রম দেখালেই সমস্যায় পড়তে হয়।” অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এই সরকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রশমনে ব্যর্থ, বরং একটি পক্ষের প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করছে। “অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ ছিল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা, কিন্তু তারা মাঠপর্যায়ে আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে”—উল্লেখ করেন তিনি।
জোটের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আমরা এমন ব্যবস্থা চাই না যেখানে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আগের শাসকদলকে পালিয়ে যেতে হয়।” তিনি অতীতের ভুল নিয়ে অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন, “৭১’র পরে যে সংবিধান পেয়েছিলাম, সেটিকে আমরা নিজেরাই বিকৃত করেছি। প্রথম ভুল ছিল বঙ্গবন্ধুর বাকশাল চালু করা, এরপর একের পর এক ভুল হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অভাব বর্তমান সরকারের বড় ব্যর্থতা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আমরা নির্বাচন চাই, কিন্তু সেই নির্বাচনে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
জোটের মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ও তাঁর সরকারকে অনুরোধ করব, একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সমস্ত দলকে অন্তর্ভুক্ত করুন। নইলে নির্বাচনের পর গঠিত সরকার টেকসই হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন মুজিবুল হক চুন্নু (Mujibul Haque Chunnu), জনতা পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর প্রমুখ।
জোটে থাকা ১৮টি দলের মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এই জোটে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলো—জাতীয় পার্টি (আনিসুল), জাতীয় পার্টি (জেপি), জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণফ্রন্ট, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় ইসলামী মহাজোট, জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), ডেমোক্রেটিক পার্টি, অ্যালায়েন্স ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি (ইউডিপি), জাতীয় সংস্কৃতিক জোট ও গণআন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যেক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং জানানো হয়—এই জোট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে, সামনে আরও দল এতে যুক্ত হতে পারে।


