ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জাতীয় সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫-এর ওপর গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পূর্বে রেকর্ড করা এক ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন (AMM Nasir Uddin)। ভাষণটি সম্প্রচার করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন (Bangladesh Television) ও বাংলাদেশ বেতারে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং তা নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে—অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে।
ভাষণে সিইসি বলেন, “সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। এবার কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না।” তিনি জানান, প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়া পোস্টাল ভোট পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে এবং নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন এবং নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার। এই বিপুল ভোটারদের জন্য মোট ৪২,৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই ধরনের নির্বাচন একদিনে হওয়ায় সময় সাশ্রয়ের জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে দুটি করে গোপন বুথ বসানো হবে। সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হয়েছে এক ঘণ্টা।
তফসিল ঘোষণার আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সিইসি বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন (Mohammed Shahabuddin)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, এবং তিনি কমিশনের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানান ইসি সচিব।
এর আগের দিন, ৯ ডিসেম্বর সিইসি সাক্ষাৎ করেন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Syed Refat Ahmed)-এর সঙ্গে। সেখানে তিনি জানান, নির্বাচনী সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদলে মাঠপর্যায়ে বিচারকদের সহায়তা প্রয়োজন হবে। এজন্য ৩০০ জন বিচারক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন কার্যত নির্বাচনী মোডে প্রবেশ করল। একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট আয়োজনের ফলে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনা দুটোই তুঙ্গে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


