এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দিনে চাঞ্চল্যকর চারটি খু’\নের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না। বিষয়টি পুলিশ, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে আড়ালে রাখতে পদে পদে কৌশলের আশ্রয় নেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত সেই তথ্য আর গোপন থাকেনি।
সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টি খু’\নসহ মোট ১৯টি মামলা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জোড়া খু’\ন এবং প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলার আলোচিত খু’\নের মামলাও রয়েছে। তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নার বিরুদ্ধেও একাধিক খু’\নসহ অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হ’\ত্যা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে সাজ্জাদ ও তামান্না জামিন পান। একই দিনে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হ’\ত্যা মামলায় এই দম্পতিসহ তিনজনকে জামিন দেন। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হ’\ত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন। ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার আফতাব উদ্দিন তাহসীন হ’\ত্যা মামলাতেও তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
চারটি মামলাতেই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমনের দ্বৈত বেঞ্চ। যদিও ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর জামিনের আদেশ দেওয়া হয়, হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর এসব আদেশে স্বাক্ষর করেন। পরে সেই জামিননামা চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছায় প্রায় আড়াই মাস পর, গত ৮ ডিসেম্বর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, তিন মাস আগে জামিন পেলেও সঙ্গে সঙ্গে জামিননামা চট্টগ্রাম আদালত বা কারাগারে পাঠানো হয়নি। বরং পদে পদে জামিন নিয়ে লুকোচুরির কৌশল অবলম্বন করা হয়। হাইকোর্টে নারী আসামি হিসেবে সহানুভূতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে চারটি মামলাতেই তামান্নার নাম রাখা হয় এক নম্বরে, আর সাজ্জাদের নাম রাখা হয় দুই ও তিন নম্বরে। অভিযোগ রয়েছে, সাজ্জাদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী পরিচয় কৌশলে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
আইন অনুযায়ী, হাইকোর্ট থেকে কোনো আসামি জামিন পেলে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে সেই জামিননামা কারাগারে পৌঁছে আসামিকে মুক্ত করার কথা। এ ছাড়া শীর্ষ বা ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের জামিন হলে রাষ্ট্রপক্ষ সাধারণত চেম্বার জজ আদালতে গিয়ে সেই জামিন স্থগিতের আবেদন করে থাকে। কিন্তু এই চারটি মামলার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
জামিনের বিষয়টি স্বীকার করে সাজ্জাদের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কারাবন্দি সাজ্জাদ ও তামান্না চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং সেই জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে হাইকোর্ট থেকে জামিননামা কেন দেরিতে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ জানান, সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় হাইকোর্টের জামিননামা এসেছে। তাঁর স্ত্রী তামান্নার চারটি মামলার জামিননামাও এসেছে। সাজ্জাদ বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে এবং তামান্না ফেনী কারাগারে থাকায় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ওই দুই কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার তিনটি জামিননামা আসার পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
পদে পদে কৌশল, দেরি হলো কেন
হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার কিছুদিন পরই খু’\ন হন সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ আরেক সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা। এই ঘটনার পর সাজ্জাদকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। প্রশাসনের নজর পড়ে তাঁদের ওপর। এরপরই জামিন পাওয়ার বিষয়টি আড়াল করতে হাইকোর্ট থেকে ধীরগতিতে জামিনের কাগজ চট্টগ্রামে আনার কৌশল নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে কেটে যায় প্রায় আড়াই মাস।
সাধারণত চট্টগ্রাম আদালতে জামিননামা পৌঁছানোর পর আসামিপক্ষ ‘জামিনের বন্ড’ না দেওয়া পর্যন্ত তা কারাগারে পাঠানো হয় না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্ড দিতেই সময় নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয় বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পরই একসঙ্গে চারটি খু’\নের মামলার জামিননামা গত ৮ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সে কারণে সাজ্জাদ রাজশাহী এবং তামান্না ফেনী কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচার চলাকালে গত ৫ নভেম্বর সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে বাজারে প্রকাশ্যে গু’\লি চালিয়ে খু’\ন করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পেছনে কারাগারে বসে ফোনের মাধ্যমে সাজ্জাদের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ সামনে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর সাজ্জাদকে রাজশাহী এবং ১৮ নভেম্বর তামান্নাকে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
এর আগে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আরেক সন্ত্রাসী বাবলাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তামান্না। এর কিছুদিন পরই প্রকাশ্যে গু’\লি করে বাবলাকে খু’\ন করা হয়।
বার্তা বাজার/এস এইচ


