অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং সম্ভাব্যভাবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Professor Dr. Muhammad Yunus)।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) কমিশনার হাজা লাহবিব (Hadja Lahbib) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকের সময় লাহবিব, সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য এবং প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ইইউ’র সহযোগিতা ও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত
ইইউ (EU) কমিশনার লাহবিব বলেন, “আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমাদের মূল বার্তা হলো, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।” তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউ’র সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তনের সময় দেখছি। যখন কোনো পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়, তখন প্রতিরোধ আসে। তাই অনেক কিছু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, আর আমরা আপনাদের পাশে আছি।”
রোহিঙ্গা সংকটে ইইউ’র ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা
চলতি বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় এবং মিয়ানমার (Myanmar)–এর সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন (Rakhine) রাজ্যে সহিংসতার শিকার জনগণের জন্য এই সহায়তা দেওয়া হবে।
লাহবিব বলেন, যদিও এ অর্থের পরিমাণ গত বছরের ইইউ অনুদানের তুলনায় বেশি, তবুও এটি রোহিঙ্গা শিবিরের মানবিক পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতি রোধে যথেষ্ট নয়, কারণ তহবিল ঘাটতি বাড়ছে।
রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক সমাধানের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল সমস্যা। বছরের পর বছর ধরে এটি চলছে, কিন্তু এখনো কোনো সমাধান নেই। কবে সমাধান হবে, তারও কোনো সময়সীমা নেই।”
তিনি ইইউ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনাকে বাংলাদেশে পেয়ে আমরা আনন্দিত। জাতিসংঘের মহাসচিবও আসছেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি।”
জলবিদ্যুৎ আমদানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নেপাল (Nepal) থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউ’র সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কথা বলি, আর এটিই সেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি। নেপাল ও ভুটান (Bhutan) উভয় দেশই আমাদের কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিক্রিতে আগ্রহী।”
ইইউ কমিশনার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার ওপর জোর দেন।