দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে আলোচনা ছাড়া স্ট্যাটাস দিতেও ‘মানা’ এনসিপি নেতাদের

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party)-র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা দেওয়া হট্টগোল, হাতাহাতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাদের পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি। বিশেষ করে দলীয় ফোরামে আলোচনা না করে শীর্ষ নেতাদের একের পর এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দলকে বেকায়দায় ফেলেছে। এ অবস্থায় দলটির নীতিনির্ধারকরা সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন এবং প্রণয়ন করছেন শৃঙ্খলাবিধি।

শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ

দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এনসিপির দুই মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah) ও সারজিস আলম (Sarjis Alam)-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। দলের ফোরামে আলোচনা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্যক্তিগত মন্তব্য করায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

বিশেষ করে এনসিপির অভ্যন্তরীণ বিষয় বা সেনাবাহিনীর মতো স্পর্শকাতর ইস্যু ফেসবুকে তুলে ধরার কারণে দলের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে ভবিষ্যতে কেউ এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে স্বস্তিবোধ নাও করতে পারে।

শীর্ষ নেতাদের স্ট্যাটাস ঘিরে বিতর্ক

গত ১১ মার্চ হাসনাত আব্দুল্লাহ ও অন্য এক নেতাকে ক্যান্টনমেন্টে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ (Awami League) পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—এমন দাবি করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন হাসনাত। এরপর রোববার সারজিস আলম ওই ঘটনার প্রক্রিয়াকে ‘অসমীচীন’ বলে অভিহিত করেন নিজের পোস্টে। এ নিয়ে এনসিপির আবদুল হান্নান মাসউদ (Abdul Hannan Masud) মন্তব্য করেন, “পাবলিকলিই বলছি, দুজনের একজন মিথ্যা বলছেন। এটা চলতে পারে না।”

এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দলীয় ফোরাম এবং সমর্থকদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, এই ধরনের আচরণ একজন রাজনৈতিক দলের নৈতিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

সিলেটে বিশৃঙ্খলা, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ

সিলেট (Sylhet)-এর এক ইফতার মাহফিলে এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি, হট্টগোল এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ (Nahid) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এসব ঘটনা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিন্তায় ফেলেছে এবং সব জেলায় সাংগঠনিক তদারকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন এবং ভবিষ্যৎ করণীয়

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার (Sarowar Tushar) জানান, কী ধরনের ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া যাবে এবং কী ধরনের ইস্যুতে নয়, তা নির্ধারণ করে শৃঙ্খলাবিধি তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরের পর এটি চূড়ান্ত হবে।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন (Samanta Sharmin) বলেন, “নতুন দলের জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা স্বাভাবিক। সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে এবং আমরা অনেক কিছু শিখছি।” তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আচরণ বিষয়ে দল এখন থেকে কঠোর হবে। মৌখিকভাবে যা বলা হয়েছিল, এবার তা লিখিতভাবে বাস্তবায়িত হবে।”

ভুলত্রুটি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী (Nasiruddin Patwari) বলেন, “একটি বিশাল অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আন্দোলন এবং রাজনৈতিক জায়গা ভিন্ন। সেখানে কিছু ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

তিনি আরও বলেন, এনসিপির নেতাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার জায়গায় ঘাটতি নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *