বহুরূপী প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

নতুন নতুন কৌশলে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আশরাফুজ্জামান মিনহাজ (Ashrafuluzzaman Minhaj) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নিজেকে কখনো ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (York University) পিএইচডি গবেষক, আবার কখনো হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির (Harvard University) প্রফেসর হিসেবে পরিচয় দিয়ে সর্বশেষ নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির (Oxford University) প্রফেসর দাবি করছেন তিনি।

প্রতারণার কৌশল ও পরিচয় বদল

নোয়াখালীর (Noakhali) মিরওয়ারিশপুর (Mirwarishpur) এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ নিজেকে বিত্তবান পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, সুইস ব্যাংকে (Swiss Bank) তার ৫৫ মিলিয়ন ডলার গচ্ছিত আছে। কখনো বিসিএস ক্যাডার (BCS Cadre) স্ত্রীর প্রভাব, আবার কখনো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়ই তার মূল কৌশল।

পুলিশ ও প্রশাসনের নজরে মিনহাজ

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (Dhaka Metropolitan Police)–এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস.এন. মো. নজরুল ইসলাম (S.N.M. Nazrul Islam) জানান, মিনহাজ বিএনপি (BNP)–র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন এবং নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রতারকের অতীত ও পরিচয় ব্যবহার

২০০৮ সালে মিনহাজের প্রতারণা শুরু হয়। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন (Sahara Khatun) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার পথ তৈরি করেন। পরবর্তীতে সাহারা খাতুনের জামাই পরিচয় ব্যবহার করে সচিব, বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে প্রতারণা শুরু করেন। একপর্যায়ে সাহারা খাতুন তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান।

একাধিক স্ত্রীর পরিচয় ও ভুয়া পরিচয়পত্র

বর্তমানে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব (Senior Assistant Secretary), একজন জজ, সাহারা খাতুনের পরিবারের সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে স্ত্রী দাবি করেন মিনহাজ। তবে শুধুমাত্র সচিবালয়ের ওই কর্মকর্তাই তাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করেন।

বিদেশি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা

মিনহাজ নিজেকে কখনো কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর (Justin Trudeau) উপদেষ্টা, আবার কখনো সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy)–এর নীতিনির্ধারক হিসেবে পরিচয় দেন। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)–এর শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথাও বলেন তিনি। এসব তথ্যের মাধ্যমে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিশ্বাস অর্জন করেন।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধোঁকাবাজি

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসটাইমসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের ভেতরে থেকেই বিদেশে অবস্থানের মিথ্যা তথ্য দেন মিনহাজ। কখনো কখনো নিজেকে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির ‘সমন্বয়কারী’ হিসেবেও পরিচয় দেন।

অপকর্মে স্ত্রীর সহযোগিতা

গত ১০-১২ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে থেকে তিনি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেন। এসব কর্মকাণ্ডে তার কথিত স্ত্রী, যিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা, সরাসরি সহযোগিতা করেন।

দুদকে অভিযোগ ও তদন্ত

একজন ভুক্তভোগী দুর্নীতি দমন কমিশনে (Anti-Corruption Commission) মিনহাজ ও তার কথিত স্ত্রী সিনিয়র সহকারী সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট সেজে অভিযান চালানো, গাড়ি জব্দ, জরিমানা এবং চাঁদাবাজি তার প্রতারণার অংশ।

কোনো সাড়া নেই অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে

সচিবালয়ে গিয়ে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সহকারী সচিব কোনো মন্তব্য না করে কক্ষ ত্যাগ করেন। অন্যদিকে মিনহাজের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *